রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিচ্ছেন দুখু মাঝি। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে। ছবি সৌজন্য রাষ্ট্রপতি ভবন।
সেই কৈশোরে এক সাহেবের কাছে শুনেছিলেন গাছ লাগালে অক্সিজেন পাওয়া যাবে। অক্সিজেন কী? কোন কাজে লাগে? সে দিনের কিশোর অত কিছু বোঝেনি। শুধু মাথায় গেঁথে গিয়েছিল কয়েকটি কথা—অক্সিজেন থাকলে মানুষ প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারবে, মানব সভ্যতা বাঁচবে। সেই থেকেই লড়াইটা শুরু। একটা, দু’টো করে চারা রোপণ করতে করতে আজ ৭৯ বছর বয়সে এসে গোটা বাঘমুণ্ডিকে সবুজ করে তুলেছেন সিঁদরি গ্রামের বৃদ্ধ দুখু মাঝি। এই ভাবনা ও উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়ে সোমবার দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে দুখু মাঝি ওরফে ‘গাছ দাদু’র হাতে পদ্মশ্রী পুরস্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতিতে বিপদ সমূহ বুঝে এখন বৃক্ষ রোপণ, সবুজ নিধন বন্ধের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এই জটিল বিষয়টাই সে দিনের কিশোর দুখু বুঝেছিলেন সরল মনে। এত বছর ধরে কোনওরকম প্রচারের আলো ছাড়াই সবুজায়নে ব্রতী বৃদ্ধ। একবার অবশ্য পুরুলিয়া বন বিভাগের বন মহোৎসবে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। গত জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী প্রাপক হিসাবে দুখুর নাম ঘোষণা করা হয়। মরণোত্তর পদ্ম সম্মানে পেয়েছেন চড়িদা গ্রামের ছৌ-মুখোশ শিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধরও। একই সঙ্গে দুই ভূমি পুত্রের সাফল্যের খবরে সে দিন থেকে আনন্দে মাতোয়ারা গোটা বাঘমুণ্ডি।
পদ্মশ্রীর খবর চাউর হওয়ার পরে দুখুর বাড়িতে পুরুলিয়ার বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, কংগ্রেসের নেপাল মাহাতোর মতো নেতাদের পদধূলি পড়েছে। হঠাৎ করে এত আগন্তুকদের আনাগোনায় খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ। তবে তাঁর সবুজ অভিযানে কোনও ছেদ পড়েনি। সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, ফাঁকা জমি পেলেই গাছ বসিয়ে দেন, সেই গাছের পরিচর্যা করতে করতে দিন শেষ হয়। পদ্মশ্রী পেয়ে দুখু বলেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি গাছ লাগিয়ে কোনওদিন এই সম্মান পাব। কী যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না। তরুণ প্রজন্মও এগিয়ে আসুক। সবাই মিলে আরও গাছ লাগিয়ে এই ধরাকে সবুজ করে তুলি আসুন।” দুখুর সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন পড়শি জিতু রুহিদাস। তাঁর কথায়, “গাছ গাছ করেই লোকটার দিন শুরু হয়। তাঁর এই প্রয়াসকে কুর্নিশ জানাই।”
বাঘমুণ্ডির বিভিন্ন এলাকায় দুখুর হাতে লালিত-পালিত মহীরুহ তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত পথিককে ছায়া দেয়। দুখুর সংসারে কোনওদিন আর্থিক প্রাচুর্য ছিল না, সরকারি ভাতার টাকায় কোনও রকমে দিন কাটে। তা নিয়ে অবশ্য দুখুর তেমন দুঃখ নেই। বৃদ্ধের আসল সম্পদ যে গোটা বাঘমুণ্ডিতে ছড়িয়ে।