ষষ্ঠীকিঙ্কর দাস। নিজস্ব চিত্র
ভূতের ভয় পাওয়া পল্টু হয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বন্ধু ষষ্ঠীর মনে আছে কলেজ জীবনের সেই স্মৃতি। ষষ্ঠীবাবু এখন চোখে দেখতে পান না। কিন্তু সেই স্মৃতি আজও তাঁর সামনে যেন ভেসে ওঠে।
সিউড়ির বারুইপাড়ার বাসিন্দা ষষ্ঠীকিঙ্কর দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারও পেয়েছেন। তিনি জানান, ১৯৫২ সালে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় প্রণববাবুর। তাঁরা ওই কলেজ থেকে একই সঙ্গে কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর হন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রণববাবু বাংলা এবং ষষ্ঠীবাবু ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেন। তবে প্রণববাবু অর্থনীতিতে খুব ভাল ফল করতেন বলে মনে আছে বন্ধু ষষ্ঠীবাবুর।
কলেজ জীবন থেকেই দুই বন্ধুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এখনও কলেজ জীবনের নানা ঘটনার কথা তাঁর মনে পড়ে। সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে ষষ্ঠীবাবু বলেন, ‘‘প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমরা পল্টু বলে ডাকতাম। খুবই শান্ত স্বভাবের এবং খুব বিনয়ী ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খুব মেলামেশা করত।’’ কলেজ জীবনের সুখস্মৃতি আজও মনে পড়ে ষষ্ঠীবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘রাতের বেলায় পল্টু ভূতের ভয় পেত। এমনকি ভয়ে ঘর থেকে বেরোত না। ওর রুমমেট ওকে সাহস জোগাত।’’ কলেজে বন্ধুরা যা কিছু পরিকল্পনা করত, তাতে প্রণববাবু সর্বদাই সঙ্গ দিতেন বলে জানাচ্ছেন ষষ্ঠীবাবু।
কলেজ থেকে বেরিয়ে বাংলা কংগ্রেসে যোগদান করেন প্রণববাবু। ষষ্ঠীবাবু জানিয়েছেন, সেই সময় সিউড়ির বাজারপাড়ার কাছে একটি দোকানে প্রায় নিয়মিত আড্ডা দিতেন অজয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বাংলা কংগ্রেস করতেন। প্রণববাবু সেখানে যেতেন নিয়মিত। সেখান থেকেই তিনি প্রথম বাংলা কংগ্রেসে যোগদান করেন। তারপর আস্তে আস্তে তিনি বিভিন্ন দফতরে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর দেশের রাষ্ট্রপতি। তবে পুরনো বন্ধুকে ভোলেননি কখনও। ষষ্ঠীবাবু বলেন, ‘‘ও যখনই বীরভূমে এসেছে তখনই আমাকে ডাকত। মন্ত্রী থাকাকালীন অনেকবার সিউড়ি এসে আমাকে ডাকত। আমি সার্কিট হাউসে গিয়ে দেখা করে আসতাম।’’
বন্ধুর অসুস্থতার খবরে খুবই বিচলিত ষষ্ঠীবাবু। শারীরিক ক্ষমতা থাকলে যে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন তাঁর কাছে, এমনও জানান ষষ্ঠীবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানি পল্টু খুব অসুস্থ। খুবই দুঃখের। ও ভারতের রাজনীতির চাণক্য। ওর মত অভিজ্ঞ কেউ নেই। আমি ভগবানের কাছে ওর সুস্থতার প্রার্থনা করছি।’’