চলল লাঠি, ফাটল শেল

পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে চড়াও হওয়ার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিড় হটাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে। মৃদু লাঠি চালানো হয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share:

টহল। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির স্মারকলিপি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বুধবার কোনওরকমে গোলমাল ঠেকানো গিয়েছিল মানবাজার ১ ব্লকের বিশরী পঞ্চায়েতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুলিশ চেষ্টা করেও অশান্তি রুখতে পারল না মানবাজার ১ ব্লকেরই জিতুজুড়ি পঞ্চায়েতে। স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিকে ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গোলমালে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল এলাকা। ইটের ঘায়ে আহত হলেন দুই পুলিশ কর্মী। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটাতে হল। বিজেপির দাবি, লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন তাঁদের কয়েক জন কর্মী।

Advertisement

পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে চড়াও হওয়ার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিড় হটাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে। মৃদু লাঠি চালানো হয়।’’ তিনি জানান, দুই পুলিশ কর্মী আহত হন।

এ দিন দুপুরে বিজেপির কর্মীরা জিতুজুড়ি পঞ্চায়েতে নানা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। দলের মানবাজার ১ মণ্ডল সভাপতি বাণীপদ কুম্ভকারের দাবি, পঞ্চায়েতকে আগাম জানিয়েই তাঁরা এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ সেখানে স্মারকলিপি দিতে যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েতে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। তৃণমূলের ছেলেরা হামলা করে। আর পুলিশ আমাদের কর্মীদের লাঠিপেটা করল। বীরেন ওঁরাং নামে এক কর্মীর লাঠির আঘাতে হাত ভেঙেছে। তাঁকে মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আরও কয়েকজন কর্মী জখম হয়েছেন।’’

Advertisement

যদিও সেই অভিযোগ মানতে না চেয়ে এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য গুরুপদ টুডু পাল্টা দাবি করেন, ‘‘আমাদের দলের অল্প ক’জন পঞ্চায়েত অফিসের কাছে থাকলেও তাঁরা কেউ গোলমাল করেননি। বিজেপিই পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই ওই দলের কার্যালয় রয়েছে। বিজেপি কর্মীরা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে জমায়েত করে স্লোগান দিতে শুরু করলে তৃণমূলের কার্যালয় থেকেও পাল্টা স্লোগান তোলা হয়। অশান্তির আশঙ্কায় সেখানে আগাম পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা ছিল। স্লোগান দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় পুলিশ দু’পক্ষকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, বিজেপি কর্মীদের মধ্য পাঁচ জন প্রতিনিধিকে পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে ঢুকতে বলা হলে তারা রাজি হননি। আরও অনেকে যেতে চান। তা নিয়ে নতুন করে অশান্তি ছড়ায়।

অভিযোগ, হঠাৎ তৃণমূল কর্মীরা বিজেপির জমায়েত লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। তাতে আগুনে যেন ঘি পড়ে যায়। দু’তরফের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। পুলিশ সামাল দিতে লাঠি চালায়। তাতেও কাজ না হওয়ায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জটলা।

এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জিতুজুড়িতে যেন অঘোষিত বন্‌ধ চলছে। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় লোক চলাচলও প্রায় নেই বললেই চলে। পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে। পঞ্চায়েত অফিসের চারপাশে ইট-পাটকেল ছড়িয়ে রয়েছে। সাইকেল, মোটরবাইক উল্টে পড়ে রয়েছে। চারপাশে চটি ছড়িয়ে রয়েছে।

ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ধৃতিমান সরকার। এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার, সিআই (মানবাজার) মনিরুল ইসলাম সরকার পুলিশ বাহিনী নিয়ে বাজার এলাকায় টহল দেন।

দিনের শেষে অবশ্য স্মারকলিপি দেওয়া আর হয়নি। পঞ্চায়েত প্রধান মিঠু সোরেন দাবি করেন, ‘‘আমরা স্মারকলিপি নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিজেপি কর্মীরা গোলমালের উদ্দেশে এসে সব ভণ্ডুল করল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement