নিহত ভাদু শেখ। —ফাইল চিত্র।
যাঁকে খুন করাকে কেন্দ্র করে দু’বছর আগে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি, রামপুরহাটের বগটুইয়ের সেই তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ হত্যা-মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হল। বুধবার রামপুরহাট দ্রুত নিষ্পত্তি বা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সন্দীপ কুণ্ডুর এজলাসে ওই সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। আজ, বৃহস্পতিবারও একই আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ হবে।
২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাট থানার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই রাতেই ভাদুর অনুগামীরা বগটুইয়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাতে ৯ জন মহিলা-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায়। পরে ভাদু শেখ খুনের মামলার তদন্তভারও সিবিআই পায়।
সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন সিবিআই এবং অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি ভাদু শেখ খুনের মামলায় ধৃত পলাশ খান, নিউটন শেখ, মাহি শেখ, সফি শেখ, নুর ইসলাম ওরফে সঞ্জু শেখ, সোনা শেখকে হাজির করানো হয়েছিল। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী বলেন, ‘‘ভাদু-খুনের মামলায় এ দিন আদালতে দু’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কারা কারা সাক্ষ্য দিয়েছে বা সাক্ষীরা কী বলেছেন, সেটা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। তবে সাক্ষীরা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে সহযোগিতা করেছেন বলা যেতে পারে।’’ সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে ভাদু শেখ খুনের মামলায় মোট ১৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ নেওয়া হবে।
অন্য দিকে, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও সুরজিৎ সিংহ জানান, ভাদু-খুনের মামলায় এ দিন যে দু’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তাঁরা দু’জনেই বগটুই হত্যা-মামলায় সিবিআই হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন নাবালক বলে জামিন পেয়েছে। অন্য জন এখনও সিবিআই হেফাজতে আছেন।
প্রসঙ্গত, ভাদু শেখ খুনের মামলায় সোনা শেখ, পলাশ খান, নুর ইসলাম-সহ ১১ জনের নাম করে এফআইআর করেছিলেন ভাদুর দাদা বিকির আলি। এফআইআরে আরও অনেকে হামলায় জড়িত বলে দাবি করা হয়েছিল। ৯ জনকে সিবিআই গ্রেফতার করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট আদালতে জমা না-পড়ায় শেরা শেখ নামে এক অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যান। প্রমাণের অভাবে দু’জনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ পড়ে। ছোট লালন নামে ভাদু-খুনে আর এক অভিযুক্ত ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। জামিনের পরের দিনই তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে ৬ জন অভিযুক্ত জেল হেফাজতে আছেন।
ভাদু শেখ খুনে অভিযুক্তদের আত্মীয় ফটিক শেখ এ দিন আদালত চত্বরে দাবি করেন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে সোনা শেখ, পলাশ খান, সঞ্জু শেষ-সহ অভিযুক্তদের। প্রত্যেকেই ঘটনার দিন বাইরে ছিলেন। ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবি বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করছে। আইনের উপরে ভরসা আছে। কী হয়, তার দিকে তাকিয়ে আছি।’’