ধৃত: বাম নেতা দিব্যেন্দু সরকার, তরুণ রাজ, অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজয় চৌধুরী (বাঁ দিক থেকে)। বাঁকুড়া আদালতে। নিজস্ব চিত্র
জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে পুলিশের উপরে হামলা চালানোর ঘটনায় চার বাম নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও ওই গ্রেফতারির পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রযেছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।
সোমবার বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে বেশ কয়েকটি দাবিতে স্মারকলিপি দিয়ে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান বাম কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ ও বাম কর্মী দু’তরফেরই অনেকে জখম হন। রাতেই বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র-সহ জেলা বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা দলের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির আহ্বায়ক সুজয় চৌধুরী এবং বড়জোড়া এরিয়া কমিটির দুই সদস্য তরুণ রাজ ও দিব্যেন্দু সরকারকে। এ ছাড়াও এবিটি-র জেলা সভাপতি তথা সোনামুখীর বাসিন্দা অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, মহিলা পুলিশ কর্মীদের মারধর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া-সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ধৃতদের মঙ্গলবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে চার দিনের জেল হাজত হয়।
ঘটনা হল, গত বিধানসভা নির্বাচনে সোনামুখী ও বড়জোড়ায় সিপিএম প্রার্থীদের কাছে পর্যুদস্ত হন তৃণমূল প্রার্থীরা। বর্তমানে এই দুই বিধানসভা এলাকাতে এখনও সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি জেলার অন্যান্য বিধানসভা এলাকার থেকে বেশি। বাম নেতাদের দাবি, শাসক দলের নির্দেশেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই এলাকার শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে সিপিএমের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছে পুলিশ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা সোমবারের হিংসাত্মক আন্দোলনে পুলিশের খাতায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রতীপ মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কোনও রকম ঝামেলায় তাঁরা জড়াননি। বরং তাঁরা সকলেই ঘটনার সময় ঝামেলা থামাতে ও দলীয় কর্মীদের শান্ত করতে ব্যস্ত ছিলেন।’’ তাহলে কেন পুলিশ গ্রেফতার করল? প্রতীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘বড়জোড়া ও সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্র এখনও সিপিএমের দখলে। আমাদের কর্মীদের মনোবল ভাঙতেই পুলিশ বেছে বেছে ওই এলাকার নেতাদের গ্রেফতার করেছে। শাসকদল পঞ্চায়েত ভোট কোন পদ্ধতিতে করতে চাইছে, এই ঘটনা তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ ভাল ভাবেই জানে যাঁদের মূল অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা কেউই হিংসাত্মক ছিলেন না। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই পুলিশ এই কাজ করেছে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় বাঁকুড়া ও বড়জোড়ায় দলের নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সভা করে বামফ্রন্ট।
জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ ঠিক পুলিশের কাজই করছে। তৃণমূল সরকার তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের মতো পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।’’ যদিও বাম নেতাদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, ‘‘হামলার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখেই ওঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’