Fraudulence at Raghunathpur

প্রতারণার টাকা জমা গুজরাতের ব্যাঙ্কে

কম খরচে আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি সরঞ্জাম দেওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা নিতেন ওই ব্যবসায়ীরা। জানাতেন, পরে মাল এলে বাকি টাকা নেবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ ০৮:৫৬
Share:

বৃহস্পতিবার সকালে বিপণির সামনে পুলিশ পাহারা। রাতে দোকান ‘সিল’ করা হয়। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

তামিলনাড়ু থেকে রঘুনাথপুরে আসবাবপত্রের ব্যবসা করতে এসেছিলেন দুই ব্যক্তি। যদিও ক্রেতারা ওই ব্যবসায়ীদের অনলাইনে যে ব্যাঙ্কে টাকা দিয়েছেন, তার ঠিকানা গুজরাতের আমদাবাদ। প্রতারণার ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

কম খরচে আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি সরঞ্জাম দেওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা নিতেন ওই ব্যবসায়ীরা। জানাতেন, পরে মাল এলে বাকি টাকা নেবেন। এ ভাবে কয়েকশো বাসিন্দার কাছ থেকে তাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিশদ তথ্য পেতে যোগাযোগ করেছে পুরুলিয়ার সাইবার ক্রাইম থানায়।

সূত্রের খবর, জানা গিয়েছে, মূল দুই অভিযুক্তের বাড়ি তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর ও তিরুচিরাপল্লিতে। যদিও তাঁদের এক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে আমদাবাদে। সেই অ্যাকাউন্টেই টাকা লেনদেন হয়েছে। আপাতত সেই ‘অ্যাকাউন্ট’-এ লেনদেন বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।

Advertisement

একই সঙ্গে দুই অভিযুক্তের আধারকার্ড থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করতে তামিলনাড়ুর সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেছে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। রঘুনাথপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মিশন রোডে যে দোকান ভাড়া নিয়ে আসবাবপত্র রেখে ব্যবসা করছিলেন দুই অভিযুক্ত, আদালতের অনুমতি নিয়ে রাতে সেটি ‘সিল’ করে পুলিশ। কিন্তু দুই অভিযুক্তের হদিস পায়নি পুলিশ। ফলে ক্ষোভ কমছে না প্রতারিত হওয়া ক্রেতাদের।

ঘটনাচক্রে যে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা ফেঁদেছিলেন ওই ব্যবসায়ীরা, সেটির মালিক রঘুনাথপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের মদন বরাটের। সেই দোকানের উপরেই আবার রয়েছে তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়।তাই বিরোধীরা ওই প্রতারণার ঘটনায় তৃণমূলকেও নিশানা করেছে।

কংগ্রেস নেতা তারকনাথ পরামানিক বলেন, ‘‘মদন বরাট দীর্ঘদিন পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। সে ক্ষেত্রে কোনও খোঁজখবর না করেই টাকার বিনিময়ে প্রতারক সংস্থাকে দোকান ভাড়া দেওয়া কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয়, সে প্রশ্ন থাকেছেই।’’

তবে মদনের দাবি, প্রায় দেড় হাজার বর্গ ফুটের দোকান ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়ার আগে দুই ব্যক্তির আধারকার্ড তিনি নিয়েছিলেন। তারপরে চুক্তি করেই দোকান ভাড়া দেন। মদন বলেন, ‘‘দোকানে কয়েক লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ছিল। তাছাড়া কোনও ক্রেতাই আগে অভিযোগ করেননি। তাহলে কী করে বোঝা সম্ভব ওই দুই ব্যক্তি প্রতারণা করবেন?”

পুরসভার দাবি, ওই বিপণি অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিল। ফলে পুরসভার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, তারা প্রতারণা করতে পারে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, অতীতে রঘুনাথপুর শহরে কমবেশি ২৫টি চিটফান্ড সংস্থা দোকান বা ঘরভাড়া নিয়ে অফিস খুলে বসেছিল। পরে সেই সংস্থাগুলি ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় বহু বাসিন্দার সর্বনাশ হয়েছে। তাহলে পুরসভা কেন সন্দেহজনক ব্যবসা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখবে না?

পুরপ্রধান তৃণমূলের তরণী বাউরি বলেন, ‘‘ঘটনাটি সামনে আসার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ী বা সংস্থা রঘুনাথপুরে দোকান বা অফিস ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করলে, মালিককে সেই সংস্থা বা ব্যক্তি সম্পর্কে ও ব্যবসা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পুরসভায় জমা করতে হবে। একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বাড়িভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও।’’ তরণী জানান, সে ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় কোনও ব্যবসা সন্দেহজনক, তা হলে তৎক্ষণাৎ পুলিশকে জানানো হবে। যা শুনে পুরবাসীদের একাংশের কটাক্ষ, আর কতবার চোর পালালে পুরসভার বুদ্ধি বাড়বে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement