সাজানো: স্কুলে পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাঁড়। ছবি: কল্যাণ আচার্য
সঞ্চয়ের অভ্যাস ফেরাতে উদ্যোগী হল স্কুল।
একসময় গ্রামগঞ্জে এত ব্যাঙ্ক ছিল না। ব্যাঙ্কে জমানোর মতো টাকাও ছিল না বহু মানুষের। তাই প্রায় প্রতিটি পরিবারে এক বা একাধিক লক্ষ্মীর ভাঁড় রাখা হতো। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে পরিবারের গৃহিণীরা তাতে সিকিটা-আধুলিটা বছরভর জমিয়ে রাখতেন। পুজো বা মেলার সময় সেই ভাঁড় ভেঙে ইচ্ছে অনুযায়ী জিনিসপত্র কেনা হতো। পরবর্তী সঞ্চয়ের জন্য কেনা হতো নতুন ভাঁড়ও। সেই ভাঁড়ে ফের নতুন করে সঞ্চয় শুরু হত। আবার ছোটখাটো বিপদেও ভরসাও ছিল ওই ভাঁড়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অভ্যেস হারিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে কচিকাঁচাদের সঞ্চয় প্রবণতাও। স্কুলস্তরে পড়ুয়াদের মধ্যে এ বার লক্ষ্মীর ভাঁড়ের মাধ্যমে সেই অভ্যাস গড়ে তুলতে উদ্যোগী হলো নানুরের আলিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫৫ জন। ওইসব পড়ুয়াদের মধ্যে স্বল্প সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়তে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ‘আমার সঞ্চয়, আমাদের সমৃদ্ধি’ প্রকল্প। শিক্ষিকা অনুপমা মণ্ডল, দেবিকা সরকাররা জানান, স্কুলের পক্ষ থেকে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে ১টি করে লক্ষ্মীর ভাঁড় কিনে দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়ারা অলঙ্করণ করে সেই ভাঁড়ে নিজের নাম লিখে নিয়েছে। শ্রেণি অনুযায়ী সেই ভাঁড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে একটি তালাবন্ধ নিরাপদ ঘরে। শিক্ষিকা চিত্রালী মুখোপাধ্যায়, গৌরী বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ও টিফিনের সময় ওই সঞ্চয়কক্ষ খোলা হয়। সেই সময় ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ ভাঁড়ে পয়সা জমা করতে পারে।’’ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বদেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজন পড়ুয়া সর্বাধিক দিনে ২ টাকা সঞ্চয় করতে পারবে। স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আগে ওই ভাঁড় ভেঙে সঞ্চয়ের পরিমাণ গুনে দেখা হবে। সঞ্চয়ে উৎসাহ দিতে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সঞ্চয়কারীকে যথাক্রমে ১০০, ৭৫ ও ৫০ টাকা পুরস্কার দেওয়া। পরবর্তী বছরের সঞ্চয়ের জন্য ফের একটি লক্ষ্মীর ভাঁড়ও দেওয়া হবে।’’
লক্ষ্মীর ভাঁড় পেয়ে উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারা। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া দাস, পূরবী ঘোষেরা জানায়, ‘‘স্কুলে আসার সময় প্রতিদিনই বাবা-মা কিছু করে পয়সা দেন। আগে আমরা চানাচুর-লজেন্স খেয়ে সব খরচ করে দিতাম। এখন কিছুটা করে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে জমা করি। বলা তো যায় না পুরস্কারটা পেয়ে যেতেও পারি।’’
খুশি বাবা-মায়েরাও। মৃন্ময়ী ঘোষ, শর্মিলা মেটে, সুদন দাসরা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমরাও মেলা থেকে লক্ষ্মীর ভাঁড় কিনে এনে পয়সা জমাতাম। ভাঁড় ভেঙে নিজেদের পছন্দসই জিনিস কিনতাম। অনেক সময় হঠাৎ প্রয়োজনে ভাঁড় ভেঙে সঞ্চিত পয়সা বাবা-মাকে ধার দিতাম। আমাদের ছেলেমেয়েরা হাতে পয়সা পেলেও রাখতে জানে না। এখন থেকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠলে ওদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’’ স্বদেশবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে এসে ছেলেমেয়েদের দোকান থেকে এটা-ওটা কিনে খেতে দেখি। তাতে পেটের রোগের আশঙ্কা থেকেই যায়। স্কুলে বারণ করলে হয়তো আটকানো যেত। কিন্তু বাড়ি গিয়ে একই কাজ করত। সেটা যাতে না হয় তার জন্যই এই উদ্যোগ।’’