আশ্বাস: পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা গড়াতেই দুমদাম শব্দে পাড়া কাঁপিয়ে ফাটতে শুরু করেছিল বাজি। আর সেই শব্দে বারবার চমকে উঠছিল কোকো, জেনি, চিনি, মিনি ও টেডি। ওরা পোষা কুকুর। তাদের সামাল দিতে গিয়ে দেওয়ালির রাত কার্যত বিনিদ্র অবস্থায় কাটাতে হল পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডের ডাক্তারি পড়ুয়া এক তরুণীকে।
দিন দিন বাড়ছে এই শহরের পরিধি। দেশবন্ধু রোডে গড়ে উঠেছে একাধিক শপিংমল। আলো ঝলমলে পথঘাটে ও বাড়ির ছাদ থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটিয়ে কিছু মানুষ আনন্দ করলেও, তা যে পড়শি বাড়িতে নিরানন্দের ছায়া ফেলেছে, তা তাঁদের মালুম হয়নি। তারই মাসুল দিতে হল পাঁচটি কুকুরকে। বৃহস্পতিবার সকালেও যেন আগের রাতের আতঙ্ক পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠেনি ওই বাড়ি।
বুধবার রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে দেশবন্ধু রোডের বাসিন্দা কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পৌলমী দাস বলছিলেন, ‘‘কুকুরের শ্রবণশক্তি প্রখর। সে জন্য বাজির শব্দ আমাদের কানে যতটা ধাক্কা দেয়, তার থেকে অনেক বেশি আঘাত করে কুকুরের কানে। বাড়িতে পাঁচটি কুকুর রয়েছে। বুধবার রাতে বাজির শব্দ ওদের যে কী কষ্ট হয়েছে, বলে বোঝানো যাবে না। বাজির শব্দে ওরা চমকে চমকে উঠছিল। দু’টো কুকুর কাহিল হয়ে পড়েছিল। তার মধ্যে জেনি খুব কষ্ট পেয়েছে।’’
তিনি জানান, এমনিতে কুকুরগুলো উঠোনে ঘুরে বেরায়। বাইরের ঘরেও থাকে।
কিন্তু, বুধবার রাতে বাজির শব্দ কানে আসার পর থেকেই কুকুরগুলো ঘরে ঢুকে কুঁকড়ে ছিল। বাজির শব্দ কানে আসতেই চমকে চমকে উঠছিল। তিনি বলেন, ‘‘কুকুরগুলোর অবস্থা দেখে কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না। বারণ করলে, কে তা শুনত? বাধ্য হয়ে ওদের ভিতরের দিকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিই। কোনও ভাবে যাতে বাইরের আওয়াজ ঘরে না পৌঁছতে পারে, সে জন্য জানলা বন্ধ করে, চাদর দিয়ে দরজার ফাঁক বন্ধ করে কোনওরকমে রাত পার করেছি। বেশি রাতের দিকে অবশ্য বাজি ফাটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, ততক্ষণে রাত অনেকটাই গড়িয়ে গিয়েছে।’’
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দেওয়ালি আলোর উৎসব। আতসবাজিতে কি উৎসব রঙিন হয় না? তাহলে তো এই বেচারারাও নিরুপদ্রবে থাকতে পারে।’’