ভিটে ছেড়ে কোথায়, শঙ্কা অরণ্যে

কারও বাস কয়েক দশক ধরে। আবার কেউ কয়েক পুরুষ ধরে বনভূমিতে বসবাস করছেন। অথচ জমি তাঁদের নামে নেই। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁদের কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লকের বনবাসীরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশীল মাহালি  

বাঁকুড়া ও খাতড়া শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারও বাস কয়েক দশক ধরে। আবার কেউ কয়েক পুরুষ ধরে বনভূমিতে বসবাস করছেন। অথচ জমি তাঁদের নামে নেই। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁদের কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লকের বনবাসীরা।

Advertisement

তবে, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক সব্যসাচী সরকার বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় এখনও আমাদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। তাই এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। রায় খতিয়ে দেখে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।”

জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসী ও বনবাসীদের জঙ্গলের উপর অধিকার নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার অরণ্যের অধিকার আইন এনেছিল। কিন্তু বন্যপ্রাণপ্রেমীদের কয়েকটি সংগঠন এই আইনের বৈধতা নিয়ে অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। জঙ্গলের জমিতে চাষবাস করার জন্য যাদের পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে, তাদের উৎখাত করারও দাবি জানানো হয়।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ গত ১৩ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১৬টি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে উৎখাত করতে হবে। রাজ্য সরকার হলফনামায় জানিয়েছে, এ রাজ্যে আদিবাসীদের ৫০,২৮৮টি আবেদন এবং বনবাসীদের ৩৫,৮৫৬টি আবেদন খারিজ হয়েছে। আদালত জানায়, পরবর্তী শুনানির আগে উচ্ছেদ না হলে তা অপরাধ হিসেবেই দেখা হবে।

এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া জেলার বনবাসীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় নানা মহল। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৬ সালে অরণ্যের অধিকার আইন তৈরি হওয়ার পরে বাঁকুড়া জেলায় বনভূমিতে বসবাসকারীদের পাট্টা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত পাঁচ বছরের মধ্যেই জেলায় ৭ হাজার ৪৫৬টি পরিবারকে বনভূমি পাট্টা দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে ৫ হাজার ৩১৬টি পরিবারের নামে জমি রেকর্ডভুক্ত করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, পাট্টা পেলেও কিছু পরিবারের তথ্যে নানা সমস্যা থাকায় তাঁদের জমি রেকর্ডভুক্ত করা যাচ্ছে না।

বাঁকুড়া জেলায় খারিজ হওয়া আবেদনের সংখ্যা কত, সে তথ্য বৃহস্পতিবার জানাতে পারেনি প্রশাসন। তবে জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলায় বহু মানুষই পাট্টা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সমীক্ষা করে দেখে পাট্টা পাওয়ার যোগ্যতা না থাকায় অনেকেরই দাবি খারিজ করা হয়েছে। আবার এমনও বহু পরিবার রয়েছে, যাঁরা দীর্ঘসময় ধরে জঙ্গলের জমিতে বসবাস করলেও পাট্টার জন্য আবেদনই করেননি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ওই পরিবারগুলির কী হবে, প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসনের অন্দরেও।

সোনামুখীর হামিরহাটি বিটের অন্তর্গত পাটজোড়া গ্রামের বাসিন্দা শিবানী টুডু দাবি করেন, “প্রায় আড়াই দশক ধরে আমরা এই গ্রামে বাস করছি। এখানে ২৫টির বেশি পরিবার রয়েছে। পাট্টা দেওয়া হলেও জমির রেকর্ডে নাম নেই। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।”

সিমলাপাল বিটের ভাদুলডোবা গ্রামের বাসিন্দা শিবরাম হেমব্রমদের তিন পুরুষের বাস জঙ্গলের জমিতে। তাঁরা জানান, পাট্টার জন্য কোনওদিন আবেদন করেননি। আবার রানিবাঁধের জভি গ্রামের বাসিন্দা ভরত পাল পাট্টা পেলেও জমির রেকর্ডে নাম ওঠেনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হলে কোথায় গিয়ে মাথা গুঁজবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না শিবিরামবাবু, ভরতবাবুরা।

‘অল ইন্ডিয়া কনফেডারেশন অফ এসসি এসটি অর্গানাইজেশন’-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি কলু বাউরির অভিযোগ, “বনভূমির পাট্টা বহু প্রকৃত বনবাসীই পাননি। তাঁদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে বন দফতর। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই পরিবারগুলিকে পাট্টা দেওয়ার দাবি তুলে আসছি কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।” ‘আদিবাসী একতা মঞ্চ’-র সভাপতি রবিনাথ মান্ডি বলেন, “বহু আদিবাসী পরিবার বনভূমিতে বসবাস করছেন বহু কাল ধরে। ওই পরিবারগুলির নিজস্ব কোনও জমি নেই। কোনও ভাবেই আদিবাসী পরিবারগুলিকে জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement