আগুন: সিউড়ির টিনবাজারে আনাজের বাজার।
দারুণ জমেছে ম্যাচ। দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করে নিজের শতরানটি করে ফেলেছে টোম্যাটো। একই রকম জমাট বরবটি-র রক্ষণ। অর্ধশতরান পূর্ণ করেছে ফেলেছে। আলু পেঁয়াজ অল্প রানে আউট হলেও ক্রিজে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে পটল, ঢ্যাঁড়শ। রান যত বাড়ছে, ক্রমশ শুকনো হচ্ছে গৃহস্থের মুখ।
জুলাইয়ের শেষ ভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের পরে আনাজের বাজারদর নিয়ে এমনই রসিকতা চলছে বিভিন্ন হোয়াটসআ্যাপ গ্রুপে। পড়ে অনেকে মজা পেলেও থলি হাতে বাজারে হাজির হলে মেজাজ চ়ড়ে যাচ্ছে তাঁদেরই। আসলে, ঠাট্টা হলেও এ সব নিদারুণ সত্যি। বৃষ্টি কমতেই বাজারে যেন আগুন লেগেছে। প্রতিদিন আনাজের দাম যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে আমজনতার হাসফাঁস অবস্থা। মাথায় হাত বিক্রেতাদেরও। চড়া দামের জন্য কমছে বেচাকেনা। ঝিঙে, পটল, বরবটি, লঙ্কা বিকোচ্ছে আড়াই থেকে তিন গুণ দামে। সব থেকে বড় কথা, বহু জায়গায় টাকা দিয়েও মিলছে না ভাল মানের আনাজ।
দুবরাজপুর ও সিউড়ির খুচরো বাজারে বৃষ্টির আগে ১৪ টাকা কেজি দরে যে পটল বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার তার দাম ছিল ৪০ টাকা প্রতি কেজি। ১৫ টাকার ঝিঙের দর উঠেছে প্রতি কিলোগ্রামে ৪০ টাকা। ১৫-২০ টাকার পেঁপে এখন ৩০-৪০ টাকা। ৮ টাকা কেজির পুঁই শাক ২০ টাকার কমে মিলবে না হাজার দরদস্তুর করেও। ১২ টাকা কেজির পুঙ্কা শাক কিনতে হলে এখন গুনে গুনে দিতে হবে ৩০ টাকা। একশো গ্রাম কাঁচা লঙ্কার দাম ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা হয়েছে। রোদ উঠার পরে পরিস্থিতি কিছুটা শোধরালেও রেস্ত বাঁচিয়ে থলে ভর্তি বাজার করতে গিয়ে ঘাম জমছে ক্রেতার কপালে। ছবিটা কমবেশি একই জেলার অন্য বাজারগুলিতেও। ঢেঁড়স, ওল, বেগুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উদ্যানপালন আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল বলেন, ‘‘এমনিতে বৃষ্টি হলেই আনাজ চাষের ক্ষতি হয়। সেখানে নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় পটল, করলা, শশা, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, লাউ ও কুমড়োর মতো ফসলের গাছে দ্রুত পচন ধরছে। উৎপাদনও কমেছে।’’ সিউড়ি ১ ব্লকের ইটাগড়িয়া, জুনিদপুর গোবিন্দপুর বাঁশজোড়, লম্বোদরপুর বা দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর, কুলেকুড়ি, পলাশডাঙা, দেবীপুর চরের আনাজ চাষিদের কথায় এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন বৃষ্টির হওয়ায় খুবই ক্ষতি হয়েছে আনাজ চাষে। বৃষ্টির বিরাম হলেও বাজারে ভাল মানের আনাজ আসতে প্রায় দিন পনেরোর অপেক্ষা বলছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বাজার থেকে ফেরার পথে অনেকেই বলছেন, ‘‘সব্জির থেকে আপাতত মাছ বা মুরগির মাংস খাওয়াই পকেটসই।’’