স্বল্প সঞ্চয়ে টাকা জমানোর জোর দিতে প্রচার, দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতি ‘হুঁশ ফিরিয়েছে’ আমানতকারীদের। স্বল্প সঞ্চয়ে আবার সু’দিনে ফিরছে বাংলা। ব্যতিক্রমী নয় বীরভূমও। সে কথা বলছে অর্থ দফতরের পরিসংখ্যানই।
দফতর সূত্রে খবর, মানুষের স্বল্প সঞ্চয়ের অভ্যাসকে আরও দৃঢ় করতে আসরে নেমেছিল রাজ্য সরকারের অর্থ বিভাগ (স্বল্প সঞ্চয়)। ওই উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে জেলা জুড়েই। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমানত জমার পরিমাণ বাড়ানোই মূল লক্ষ্য। এতে সাধারম মানুষের পাশাপাশি লাভবান হবে রাজ্যও। আমানতকারীরা টাকা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলেই রাজ্যের লাভ। কারণ, নিট সঞ্চয়ের উপরই রাজ্য ‘ধার’ পেতে পারে।
নভেম্বরের ২৭ থেকে ২৯ তারিখ জেলার তিনটি মহকুমায় মানুষকে স্বল্প সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। পথনাটিকা, লোকসঙ্গীত, পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে জেলার মানুষের কাছে বার্তা দেওয়া হয়, ‘‘অধিক সুদ বা লাভের আশায় যেখানে সেখানে টাকা রেখে ঠকবেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় থাকা ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমান ও নিশ্চিতে থাকুন।’’ রাজ্য অর্থ দফতরের নির্দেশে জেলার বিভিন্ন অংশে পথনাটিকা, লোকগান ছাড়াও সাধারণের জন্য একটি লিফলেট ছড়ানোর কর্মসূচিও নিয়েছিলেন জেলা স্বল্প সঞ্চয় উপ অধিকর্তা মহম্মদ আব্রার আলম। ব্যাঙ্কের থেকে ডাকঘরে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমানোর দিকেই জোর দেওয়া হয়েছিল প্রচারে। তাতেই ভাল সাড়া মিলেছে বলে দফতর সূত্রে খবর।
দফতর সূত্রে খবর, এক সময় ডাকঘর থেকে টাকা তুলে আমানতকারীদের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করার প্রবণতা বেড়েছিল। সারদা-সহ একগুচ্ছ বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার দাপটে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন রাজ্যের সাধারণ আমানতকারীরা। ডাকঘরে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখার পরিবর্তে তাঁরা বেশি সুদের লোভে বেছে নিচ্ছিলেন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পই। এমনকি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে জমা আমানত মেয়াদ শেষের আগে তুলে নিয়ে অনেকে তা জমা রাখছিলেন বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায়। ফলে, এ রাজ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি ধুঁকতে শুরু করেছিল। ২০১৩ সারদা-কাণ্ডে দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার সময় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে রাজ্যের ভাঁড়ারে পড়ে ছিল মাত্র ১২৫ কোটি টাকা। তার ঠিক আগের বছরে স্বল্প সঞ্চয় মাইনাস ব্যালান্সে চলে গিয়েছিল।
সেই দুঃসময় অতীত। দফতর সূত্রেই খবর, গত অর্থবর্ষে শুধু বীরভূম থেকেই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে মোট আমানত ২৪৭১ কোটি টাকা। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে আমানতের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে, যা আমানতকারীদের ‘ঠেকে শেখা’র নজির বলেই মনে করছেন স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকদের একাংশ। তবুও সেটা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, ২৬০০ কোটি, ছুঁতে পারেনি। চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ৩০০০কোটি। অক্টোবর পর্যন্ত মোট আমানতের পরিমাণ ২১২৯.৪৯ কোটি টাকা। তবে যে ভাবে গ্রাফ এগোচ্ছে তাতে সহজেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলতে আশাবাদী অর্থ বিভাগের জেলা স্বল্প সঞ্চয় বিভাগের আধিকারিকরা। জেলার সিউড়ি হেড পোস্ট অফিসের সুপারিন্টেনডেন্ট কাশীনাথ ঘোষও বলছেন, ‘‘মানুষ আবার আগের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখছেন। প্রতি বছর লাফিয়ে বাড়ছে টার্গেট।’’