ফাইল চিত্র।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে সবার নজর এড়িয়ে পালিয়ে গেলেন রোগী। নতুন জেলাশাসকের পরিদর্শনের পরের দিন রবিবারের এই ঘটনাকে ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কে জড়াল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তল্লাশি চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই রোগীকে উদ্ধার করতে পারায় স্বস্তি পেয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যদিও রোগীদের পরিজনদের দাবি, হাসপাতালে রোগীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে কী হাল, তা এ দিন ফের বেআব্রু হয়ে পড়েছে। শনিবারই বাঁকুড়া মেডিক্যাল পরিদর্শন করে হাসপাতালের নানা অব্যবস্থা দেখে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন নতুন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। ঠিক তার পরেরদিনই এমন ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ জুন ইঁদপুরের গোয়ালডাঙার বছর ছাব্বিশের যুবক অনন্ত খানকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। বিষক্রিয়া জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছিল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। এরই মাঝে রবিবার ভোরে সিসিইউ ওয়ার্ড থেকে হাসপাতাল কর্মীদের নজর এড়িয়ে বেরিয়ে যান তিনি। পরে বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে অনন্তকে উদ্ধার করেন পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মীরা।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সিসিইউ ওয়ার্ডে সিসিক্যামেরা থাকলেও তা বর্তমানে বন্ধ। প্রাথমিক তদন্তের পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আনুমানিক ভোর চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে অনন্ত ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পড়েন। পরে তা জানাজানি হতেই হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মীরা হাসপাতালের ভিতর ও বাইরে খোঁজ শুরু করেন।
সিসিইউ-তে ভর্তি থাকা রোগীদের একটি বিশেষ পোশাক পরানো হয়। সেই পোশাকই অনন্তকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে বলে জানাচ্ছেন হাসপাতালের কর্তারা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভৈরবস্থান এলাকায় অনন্তর খোঁজ করতে গিয়ে হাসপাতালের কর্মীরা জানতে পারেন, ওই পোশাক পরা এক যুবক তামলিবাঁধের দিকে হেঁটে গিয়েছেন। এরপরেই তামলিবাঁধের দিকে তাঁরা রওনা দেন। তামলিবাঁধ এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ পাঁচিলের সামনে অনন্তকে বসে থাকতে দেখেন হাসপাতালের কর্মীরা। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালের সুপার শুভেন্দুবিকাশ সাহা বলেন, “যে সময়ে ওই রোগী বেরিয়ে যায়, তখন ওই ওয়ার্ডের বাইরে নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তও করা হবে।” কেন ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন অনন্ত? শুভেন্দুবিকাশবাবুর দাবি, “বিষক্রিয়ায় অসুস্থ রোগীদের কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যার জেরে সাময়িক ভাবে তাঁদের মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে অনেক সময়। ওই রোগীও তেমনই কিছু সমস্যায় ভুগছেন কি না খতিয়ে দেখছি।” বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখে কারও দোষ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, এটাই প্রথম নয়, বাঁকুড়া মেডিক্যাল থেকে রোগী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা আগেও সামনে এসেছে। রোগীর পরিজনদের একাংশের দাবি, বারবার এই ধরনের ঘটনার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেয়। যদিও তার পরেও ফের একই ঘটনা ঘটে। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানোর দরকার রয়েছে। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনকে জানিয়েছি।”