বৃষ্টি মাথায় ওয়ার্ডের পথে

রোগী স্থানান্তরের পরে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড নেই। আছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। এ দিকে, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আবার নেই জরুরি বিভাগ।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৯:২০
Share:

এ ভাবেই দুই হাসপাতালের মধ্যে রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে পরিজনদের। নিজস্ব চিত্র

জেলা হাসপাতালের পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড খালি করে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল নতুন তৈরি হওয়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সে বছর খানেক আগের কথা। তার পরে পুরোদস্তুর বর্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই প্রথম। আর তাতেই রোগী এবং পরিজনেরা নাস্তানাবুদ হচ্ছেন।

Advertisement

রোগী স্থানান্তরের পরে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড নেই। আছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। এ দিকে, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আবার নেই জরুরি বিভাগ। ফলে জেলা হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দেখানোর পরে যে সমস্ত রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে হয়, তাঁদের সেখান থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। দূরত্ব মাত্র ২৫০ মিটার। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমনই যে রোগী এবং পরিজনেদের ভোগান্তির একশেষ হয়।

বৃষ্টিতে সেই ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সময়েই একপ্রস্ত ঝামেলা সইতে হয়। জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে খোলা আকাশের নীচ দিয়ে, খানা খন্দ পেরিয়ে, বৃষ্টি মাথায় সুপার স্পেশ্যালিটিতে আসতে হচ্ছে রোগীদের। বুকে ব্যথা নিয়ে বিষ্ণুপুরের কুরবানতলার ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শেখ দিল মহম্মদ রবিবার এসেছিলেন জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় সুপার স্পেশ্যালিটির মেডিসিন বিভাগে। ওই রাস্তাটুকু অসুস্থ বাবাকে নিয়ে যেতে নাস্তানাবুদ হয়েছেন দিল মহম্মদের ছেলে শেখ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বড্ড অসহায় লাগছিল। বাবার বুকে ব্যাথা ওঠায় তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েছিলাম। ছাতাও নিতে পারিনি। মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার সময়ে এক দোকানদারের থেকে ত্রিপল চেয়ে, সেটাই সবাই মিলে মাথার উপরে ধরে স্টেচার ঠেলে বাবাকে নিয়ে গিয়েছি। ওই টুকু রাস্তায় এত খানাখন্দ, মনে হচ্ছিল পথ ফুরোচ্ছেই না।’’ এত চেষ্টার পরেও বাবাকে বৃষ্টি থেকে আগলে রাখতে পারেননি সিরাজুল। ভিজে গায়ে ওয়ার্ডে পৌঁছন ওই বৃদ্ধ।

Advertisement

সমস্যা হচ্ছে ভর্তি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রেও। সোমবার সিটি স্ক্যান করানোর জন্য বৃদ্ধ গোপালচন্দ্র গড়াইকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ থেকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন ছেলে বিশ্বজিৎ। সত্যপীরতলার বাসিন্দা গোপালবাবু পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘বৃষ্টির মধ্যে বাবাকে এইটুকু রাস্তা পার হতেই নাজেহাল হচ্ছি।’’ সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স–রে, ডায়ালিসিস— বিভিন্ন পরিষেবার জন্যই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় রোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক এবং নার্সদের একাংশ জানান, ওষুধ, রিপোর্ট প্রভৃতি নিয়ে তাঁদেরও বৃষ্টি মাথায় এ বাড়ি – ও বাড়ি ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।

জেলা হাসপাতাল থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মধ্যে একটা শেড লাগানো করিডর বানিয়ে দিলে এই সমস্যা আর থাকে না। কিন্তু সেটাই হচ্ছে না। হাসপাতালে আসা হেতাগোড়া গ্রামের প্রবীণ ধীরেন সর্দার, বিষ্ণুপুরের খড়বাংলা এলাকার বৃদ্ধা সন্ধ্যা বাগদি, বোলতলার প্রতিমা চন্দ্ররা বলেন, ‘‘অনেক টাকা টাকা খরচ করে ঘাস বসিয়ে তড়িঘড়ি বাগান বানানোর চেয়ে এই শেড তৈরি করাটা অনেক জরুরি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটা বুঝছে না কেন?’’

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের খাতা থেকে জানা যাচ্ছে, গত বৃষ্টির মধ্যে তিন দিনের প্রতিদিন মহিলা এবং পুরুষ মেডিসিন বিভাগে গড়ে ১২০ জন করে দুর্ভোগ সয়ে ভর্তি হতে গিয়েছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার জন্য রোগীদের নিয়ে ছোটাছুটি তো রয়েইছে। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপার তথা বিষ্ণুপুরের জেলা সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, ‘‘আমি নিরুপায়। টাকা বরাদ্দ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। স্বাস্থ্য ভবনে পরিকল্পনা জমা দিয়ে রেখেছি।’’

তিনি জানান, পুজোর আগেই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে একটি জরুরি বিভাগ খোলা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। হয়ে গেলে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে বলে তাঁর মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement