সুশ্রূষা: বাঁকুড়া মেডিক্যালের এটাই চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের বেডে জায়গা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন রোগীরা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রোগীদের এই দুর্দশার ছবি দেখে অসন্তুষ্ট সাংসদ মুনমুন সেন অধ্যক্ষকে ফোন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বললেন। প্রয়োজনে তিনিও এ ব্যাপারে চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিলেন। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘সাংসদ রোগীদের বেড না পাওয়ার সমস্যা নিয়ে ফোনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁকে বিশদে সব জানিয়েছি। তিনিও সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন।’’
ঘটনা হল, বাঁকুড়া মেডিক্যালে রোগীদের বেড না পাওয়ার সমস্যা বহু পুরনো। রাজ্যে পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হাসপাতালের পরিকাঠামোর কিছুটা উন্নতি হলেও বেডের অভাব মেটেনি। হাসপাতালের এক কর্তা উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘এখানে জেনারেল পুরুষ বিভাগে ৬৬টি ও মহিলা বিভাগে ৬৭টি বেড রয়েছে। কিন্তু দৈনিক এই দু’টি ওয়ার্ডেই গড়ে প্রায় দুশো রোগী ভর্তি থাকেন। রোগী এলে বেড নেই তাঁদের ফেরত পাঠানো তো যায় না।’’ তিনি জানান, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে ২৪০টি বেড থাকলেও সেখানে গড়ে ৪০০-র বেশি রোগী থাকেন। শিশু বিভাগে বেড রয়েছে ৭২টি। কিন্তু রোগী থাকে কমবেশি দেড়শো। মেডিক্যালে ২৫টির বেশি ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১০১২টি। কিন্তু দৈনিক ১৮০০-র বেশি রোগী ভর্তি থাকেন।
বেড বাড়ানো হচ্ছে না কেন? ওই কর্তা বলেন, ‘‘শুধু বেড বাড়ালেই তো সব সমস্যা মিটবে না। বেডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মীও বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু শূন্যপদই পূরণ হচ্ছে না, বাড়তি ডাক্তার, কর্মী কোথা থেকে পাব?’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বাঁকুড়া মেডিক্যালে এখন একশোটি মেডিক্যাল অফিসারের পদ বরাদ্দ রয়েছে। মাসখানেক আগে জেলায় চালু হওয়া কয়েকটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ৩০ জনের মতো মেডিক্যাল অফিসার দেওয়ার পরে এখন বাঁকুড়া মেডিক্যালে মোটে ৩০ জন রয়েছেন। মুষ্টিমেয় মেডিক্যাল অফিসারদের নিয়ে অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সিসিইউ, আইসিসিইউ, এইচডিইউ, জরুরি বিভাগগুলি সামলাতে হিমসিম অবস্থা কর্তৃপক্ষের।
ক্যানসার বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করা যাচ্ছে না বলে কেমোথেরাপির কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ক্যানসার বিভাগে দু’জন চিকিৎসক বহির্বিভাগ সামলে মাঝে মধ্যে কেমোথেরাপি করছেন রোগীদের। নার্সের অভাবে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে রাতে অনেক সময় নার্সই দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সাফাই কর্মীও বাড়ন্ত।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘সব সমস্যাই স্বাস্থ্য ভবনের নজরে রয়েছে।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘মেডিক্যালের চিকিৎসা পরিষেবা ভাল হওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, পড়শি রাজ্য থেকেও রোগীদের এখানে নিয়ে আসা হয়। সে কারণেই বেডের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি। এর সমাধান কী, ভাবা হচ্ছে।’’
যদিও এ দিন বারবার চেষ্টা করেও বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁকে এসএমএস করেও জবাব মেলেনি। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার নিজেও চিকিৎসক। মুনমুনের এই সক্রিয়তা দেখে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘উনি তিন বছর হল সাংসদ হয়েছেন। অথচ বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগীদের সমস্যা এত দিনে তাঁর নজরে পড়ল! জেলায় না এলে সমস্যা জানবেন কী করে?’’
জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কে বলেন মুনমুন জেলায় আসেন না? তিনি যথেষ্টই আসেন। নিয়মিত জেলার উন্নয়নের খোঁজ খবরও নেন।’’