পাঁচ বছরের কর্মজীবনে ৩১০টি অভিযানের প্রথম সারিতে ছিল সে। ফাইল চিত্র।
‘প্লুটো’ আর পৃথিবীতে নেই। নবমীতে বান্দোয়ানের গুড়পানা ক্যাম্পে মৃত্যু হয়েছে মাওবাদী দমনে সিআরপির অনেক অভিযানের সঙ্গী প্রশিক্ষিত জার্মান শেপার্ড কুকুরটির। বয়স হয়েছিল ন’বছর। পাঁচ বছরের কর্মজীবনে ৩১০টি অভিযানের প্রথম সারিতে ছিল সে। সিআরপির গুড়পানা ক্যাম্পের কমান্ডান্ট অমিতকুমার গুপ্ত জানান, সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে শরীর ভাল ছিল না কুকুরটির। পশু চিকিৎসক দেখছিলেন।
সিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লুটোর জন্ম ২০১০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এক বছর বয়সে পুলিশে ভর্তি হয়। ন’মাস পঞ্জাব পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের পরে প্রথম ‘পোস্টিং’ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির জামতোলগোড়া ক্যাম্পে। ২০১৪ সাল থেকে প্লুটোর ঠিকানা ছিল বান্দোয়ানের গুড়পানা ক্যাম্প। বেতন ছিল সাত হাজার টাকা। সেটা বরাদ্দ করত স্বরাষ্ট্র দফতর। তার দেখভাল করতেন সিআরপির জওয়ান শেখ গোলাম মোস্তাফা।
কুলার আর পাখার হাওয়ায় লাল মাটির গরমের মোকাবিলা করে নিত প্লুটো। আর বিভিন্ন সময়ে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে সিআরপির একক এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে শামিল হত। কখনও ‘লং রুট পেট্রোলিং’-এ গিয়েছে। কখনও নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে অভিযানে পথ দেখিয়েছে বাহিনীকে। সিআরপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, একবার ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে ‘ডিউটি’ পড়েছিল প্লুটোর। সে বার ‘আইইডি’ (ইমপ্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) খুঁজে বার করেছিল সে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্লুটো বেশ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল বলে গুড়পানা ক্যাম্পের একটি সূত্র জানাচ্ছে। তার দৈনিক খাদ্য ছিল ২০০ গ্রাম আটার রুটি, পাঁচশো গ্রাম মুরগির মাংস আর দুধ। ওই সময় থেকেই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছিল না।
৫ অক্টোবর, সপ্তমীর সকাল থেকে বেশ ঝিমিয়ে পড়ে প্লুটো। ৭ অক্টোবর মৃত্যু হয়। তার পরে কলকাতার বেলগাছিয়ার পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে গিয়ে প্লুটোর দেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়। কফিনবন্দি দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকে। সেখানে সিআরপির ৩ নম্বর সিগন্যাল ব্যাটেলিয়ন তাকে গান স্যালুটে অভিবাদন জানায়। ছিলেন বাহিনীর বড় কর্তারা। হাওড়ায় বাহিনীর ১৬৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ন আর এক প্রস্ত গান স্যালুট দিয়ে প্লুটোর দেহ সমাহিত করে। গুড়পানা ক্যাম্পের কমান্ডান্ট অমিতকুমার গুপ্ত বলছিলেন, ‘‘অনেক দিনের সঙ্গী ছিল প্লুটো। বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।’’