Ram Navami Rally

রামনবমীর মিছিলে রাজনীতির অঙ্ক, তৎপর শাসক-বিরোধী

রামনবমী বাইরে ধর্মীয় উৎসব হলেও ভিতরে রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে। বিশেষত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উৎসবকে হাতছাড়া করতে রাজি ছিল না গেরুয়া, সবুজ কোনও শিবিরেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৭
Share:

পাশাপাশি: বোলপুরে রামনবমীর মিছিলে একসঙ্গে দেখা গেল তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্বকে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দোরগড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। প্রস্ততি নিচ্ছে শাসক-বিরোধী উভয়েই। বৃহস্পতিবার জেলা জুড়ে রামনবমী পালনেও এ বার সেই প্রস্তুতির ছাপ দেখা গেল। কে কত বড় রামভক্ত— তার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতাও ছিল। এমনই দাবি জেলাবাসীর। কোথাও পৃথক শোভাযাত্রা বের হল দু’টি শিবির থেকে। কোথাও আবার বিজেপি নেতাদের পাশে দেখা গেল শাসক দলের নেতা, কর্মীদের। কয়েকটি জায়গায় মিছিলে অস্ত্র দেখা গিয়েছে। ছিল ডিজেও। তবে জেলা জুড়েই এই উপলক্ষে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।

Advertisement

রামনবমী বাইরে ধর্মীয় উৎসব হলেও ভিতরে রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে। বিশেষত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উৎসবকে হাতছাড়া করতে রাজি ছিল না গেরুয়া, সবুজ কোনও শিবিরেই।

সিউড়ি ঘেঁষা প্রাচীন জনপদে কড়িধ্যায় ১৯৮৯ সালে থেকে রামনবমীর মিছিল হয়ে আসছে। অলিখিত ভাবে শোভাযাত্রা আয়োজন করে গেরুয়া শিবির। এ বারও সেই ধারা বজায় রেখেছে কড়িধ্যা। প্রথা মেনে বৃহস্পতিবার কড়িধ্যার শালবনি গ্রাম সংলগ্ন ছোড়া বিট অফিসের কাছে থেকে তেতুঁলতলা মোড় পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। অংশ নেন বহু পুরুষ, মহিলা। তবে এ বারই প্রথম কড়িধ্যার তেঁতুলতলা মোড় থেকে কড়িধ্যা ইউনিয়ন বোর্ড পর্যন্ত তৃণমূলের রামনবমীর পৃথক শোভযাত্রা হল। নেতৃত্বে স্থানীয় বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায, ব্লক সভাপতি রত্নাকর মণ্ডলের মতো শাসকদলের নেতারা।

Advertisement

কড়িধ্যায় যখন দু’টি পৃথক শোভাযাত্রা। ঠিক তখন বিপরীত ছবি দেখা গিয়ছে দুবরাজপুরে। দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দির থেকে রামনবমী উপলক্ষে একটি বিশাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় এ দিন পাশাপাশি হাঁটতে দেখা গেল দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা, প্রাক্তন জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, দুবরাজপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে, তৃণমূল শহর সভাপতি স্বরূপ আচার্য ও অন্যান্য তৃণমূল পুর-প্রতিনিধিদের। এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রামকে যাঁরা মানেন তাঁরা সকলেই আসবেন। সেখানে রাজনীতির গণ্ডি টানা ঠিক নয়। জানালেন পুরপ্রধান, বিধায়ক দু’জনেই। তবে স্থানীয়েরা মনে করাচ্ছেন, ১৬ সাল থেকে এমন শোভাযাত্রা হচ্ছে। আগে এই দৃশ্য দেখা যায়নি।

প্রায় একই ছবি বোলপুরে। বোলপুর রেল ময়দান সংলগ্ন দুর্গামন্দির থেকে রামনবমী উৎসব উদ্‌যাপন কমিটি আয়োজিত রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেল বিজেপি, তৃণমূল দু’তরফের নেতাদের। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য দিলীপ ঘোষ ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে তৃণমূল পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ, সুকান্ত হাজরা, উপ পুরপ্রধান ওরম শেখদের। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সেখানে রাজনীতি মেশানো যাবে না।’’ একই বক্তব্য পর্ণাদেরও। নলহাটির রামনবমীর মিছিলেও দুই শিবিরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সরাসরি অংশ না নিলেও সৌহার্দ্য বিনিময়ের দৃশ্য দেখা গিয়েছে রামপুরহাট ও সিউড়ি শহরেও। এ দিন সকালে বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দুপরিষদ আয়োজিত রমনবমী শোভাযাত্রা রামপুরহাট স্টেশন সংলগ্ন ময়দান থেকে শুরু হয়ে পাঁচমাথা মোড়, মহাজনপট্টি কামারপট্টি ছুঁয়ে ফেরত যায়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতারা।

মিছিলটি যখন মহকুমাশাসকের কার্যালয় অতিক্রম করছে, তখন সেখানে শাসকদলের ধর্না মঞ্চে উপস্থিত স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের জল ও মিষ্টি-মুখ করাতে দেখা যায়।

রামনবমী উপলক্ষে সিউড়ি শহরে শুঁড়িপুকুর পাড়া থেকে স্থানীয় হনুমান মন্দির পর্যন্ত বিশাল একটি শোভাযাত্রার আয়োজিত হয়েছিল। মানিক মারোয়াড়ি মোড়, চৌরাস্তা, ত্রাণসমিতি, পুলিশ লাইন, কলেজ পাড়া হয়ে ওই শোভাযাত্রা যাওয়ার সময়ে তৃণমূলের উপ পুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউয়ের সঙ্গে বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়। দু’পক্ষই সৌজন্য বিনিময় করেন।

রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছে জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই হয়েছে। মহম্মদবাজারের ভূতুড়া, শঙ্করপুর, পটেল নগর, বৈদ্যনাথপুরে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় রামনবমী। রামনবমী পালিত হয়েছে সাঁইথিয়াতেও। খয়রাশোল রাজনগরের মতো এলাকার কোথাও কোথাও এ বারই প্রথম রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছে। আয়োজনের নেপথ্যে কোথাও ছিল শাসক কোথাও গেরুয়া শিবির। উদ্দেশ্য একক ভাবে গেরুয়া শিবিরকে কৃতিত্ব নিতে না দেওয়া।

তবে সাঁইথিয়া লাউজোড় দুর্গামন্দির থেকে পালির মোড়, রামপুরহাট, সিউড়ি শুঁড়িপুকুর থেকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী কয়েক জনের হাতে হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে। ছিল বড় বড় সাউন্ড বক্সও। ডিজে বাজানো নিয়ে পুলিশ কিছুটা কড়া অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত শব্দ-তাণ্ডব দমাতে পারেনি। তবে মিছিলে অস্ত্র থাকলেও আস্ফালন ছিল না বলেই স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement