২০১৯-এ জয়চণ্ডী পাহাড়ের শিবিরে মিলন সেনগুপ্ত। ফাইল চিত্র।
আশি পেরনোর পরেও, বছরের শেষ পাঁচটা দিন পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে এসে কচিকাঁচাদের পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিয়মে ছেদ পড়েনি। এমনকি, বছর দুয়েক আগে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পেলেও হুইল চেয়ারে বসে যোগ দিয়েছিলেন শিবিরে। তবে এ বারে, আসানসোলের শ্রীপল্লির বাসিন্দা মিলন সেনগুপ্তের হাতে গড়া সংস্থাটি তার জন্মদাতাকে ছাড়া শুরু করল প্রশিক্ষণ শিবির। চলতি বছরের জুলাইয়ে বার্ধ্যকজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে মিলনবাবুর। সংস্থার কার্যকরী সভাপতি সৈকত হাজরা বলেন, ”জয়চণ্ডীকে চিনিয়েছেন মিলনবাবুই। ওঁকে ছাড়া কোনও দিন শিবির হবে, ভাবনাতেই ছিল না। শিবির হচ্ছে বটে, কিন্তু কারও মন ভাল নেই।”
সোমবার থেকে জয়চণ্ডী পাহাড়ের পাদদেশে শুরু হয়েছে এ বারের শিবির। শিবিরের শুরুতে এক স্মরণসভায় মিলনবাবুর স্মৃতিচারণা করেন সংস্থার কর্মকর্তারা। সংস্থার সভাপতি সত্যেন আগরওয়াল বলেন, ”মিলনবাবুর দেখানো পথেই শিবির শুরু হয়েছে। উনি যে ভাবে সমস্ত দিক নজরে রেখে, গুছিয়ে শিবিরের আয়োজন করতেন, সে ভাবে করার চেষ্টা করেছি আমরা।”
ইচ্ছা ও ভালবাসা থাকলে বয়স যে কোনও বাধা হতে পারে না, শিক্ষার্থীদের তা বারে বারে বুঝিয়েছেন মিলনবাবু, জানাচ্ছেন সংস্থার সদস্যেরা। তাঁরা জানান, টানা ৩৫ বছর জয়চণ্ডী পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বয়সের ভারে শেষের কয়েকটা বছর নিজে পাহাড়ে চড়তে পারতেন না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখাতেন পাহাড়ে চড়ার কৌশল-সহ খুঁটিনাটি সব দিক। কার্যকরী সভাপতি সৈকতের কথায়, ”মিলনবাবুর কাছে প্রতিটি শিক্ষার্থীই পাহাড়ে চড়ার প্রাথমিক কৌশল শিখে বাড়ি ফিরবে, এ বিশ্বাস আমাদের সকলের ছিল। তাই এ দিকে ভাবার কোনও প্রয়োজন হত না। এ বারে ওঁর অভাবটা বেশি করে উপলব্ধি হচ্ছে।”
সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মিলনবাবুর ভাইপো ও ভাইঝি, বছর ষাটের সুবিনয় গুপ্ত, গৌরী গুপ্তও। তাঁরা জানান, কাকার পাহাড়ের প্রতি টান বংশগত। গোটা কুড়ি শৃঙ্গ অভিযানে গিয়েছিলেন। জয় করেছিলেন তিন-চারটি অত্যন্ত দুর্গম শৃঙ্গ। সুবিনয় বলেন, ”সংস্থাটি তৈরির পরে থেকে ফি বছর নিয়ম করে ডিসেম্বরের শেষ পাঁচটা দিনে শিবির করতেন জয়চণ্ডীতে। এ বারেও শিবির হচ্ছে, তবে কাকা নেই।”