নির্ভয়ে ভোট দিন। রবিবার খয়রাশোলের লাউবেড়িয়া গ্রামে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
রাজনীতি থেকে কুটকচালি হরেক আলোচনা জমে চায়ের দোকানেই।
বাঙালির সেই চায়ের দোকানের আড্ডাকেই ফুটিয়ে তুলল মানব পুতুলেরা। নাটকের মাধ্যমে ভোটারদের দিল নির্ভয়ে ভোট দিতে যাওয়ার উৎসাহ। রবিবার সকালে এমনই অভিনব দৃশ্য দেখা গেল খয়রাশোলের লাউবেড়িয়া গ্রামে।
গ্রামের কামরপাড়ায় এ দিন বসেছিল সেই নাটকের আসর। আর এমন ‘নাটক’ দেখতে শুধু পুরুষ মহিলা নতুন ভোটারেরাই নন, ভিড় জমিয়েছিল কচি-কাঁচারাও। সেই নাটকের গল্পটা কী?
সাত সকাল। পাড়ার চায়ের দোকানি গোপালদা তখন উনুন ধরাতে ব্যস্ত। তার মধ্যেই দোকানে খদ্দের উপস্থিত— ‘কৈ গো গোপালদা, এক ভাঁড় চা দাও দেখি’। ‘এই তো সবে উনুন ধরালাম, একটু বসতে হবে....,’— গোপালদার আওয়াজ ভেসে আসে ভেতর থেকে। সময় কাটাতে অগত্যা খবরের কাগজ চেয়ে নিলেন খদ্দের। কিন্তু কাগজে দু’এক পাতা চোখ বুলিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে খদ্দের বলে উঠলেন, “কাগজ জুড়ে শুধু ভোট ভোট ভোট। দেশে কি আর খবর নেই!’’ সেই শুরু। তার পরেই চায়ের দোকানে পৌঁছে যান পুতুল সাজের আরও দুই চরিত্র। এক জন তরুণ ভোটার, অন্য জন মাঝবয়সী। কিন্তু ভোট নিয়ে বা ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে কারও উৎসাহ ছিল না। তাঁরা প্রত্যেকেই ভোট দানে অনিচ্ছুক। তাঁদের অজুহাত, ভোট দিয়ে কী লাভ। ভোটকে ঘিরে ঝামেলার ভয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু চায়ের দোকানি গোপাল সে কথায় দমেননি। বরং সমাধান খুঁজতে শেষ পর্যন্ত সকলকে নিয়ে স্থানীয় বিডিও-র দ্বারস্থ হন তিনি। বিডিও বোঝান, কেন ভোট দেওয়া জরুরি। সঙ্গে বোঝান ভোট দেওয়ার জন্য কেউ যেন প্রলোভন পা না দেন। সচতনতা বৃদ্ধিতে গোপাল উল্লখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন, তাই বিডিও গোপালকে সম্মানিতও করেন।
বীরভূমের ‘লাভপুর সংস্কৃতি বাহিনী’র মানব পুতুলকে ব্যবহার করে ‘নির্মল বাংলা’ বা ‘সাক্ষর ভারত মিশন’-সহ একাধিক সচেতনতার কাজে ব্যবহার করছে জেলা প্রশাসন। এ বার মানব পুতুল নাটক ‘মৈত্রীর বন্ধন’কে ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যম হিসাবে কাজে লাগালো খয়রাশোল ব্লক। এর মাধ্যমে ভোটারদের সামনে ভোট সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা এবং নীতি মেনে সকলেই যেন ভোট দিতে যান, সেই আবেদেন রাখতেই এই প্রয়াস বলে জনিয়েছেন খয়রাশোল ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। শুধু লাউবেড়িয়া নয়, ‘মৈত্রীর বন্ধন’ নামে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ওই নাটক দেখানো হয়েছে বাবুইজোড়, হজরতপুর এবং বড়রা গ্রামেও।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় যে এলাকাগুলিতে ভোটদান শতাংশের হিসাবে কম হয়েছ, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সেই এলাকায় ভোটারদের সচেতন করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। এরই অঙ্গ হিসাবে মানব পুতুল নাটক। সঙ্গে কী ভাবে ভোট দেবেন, তা ‘মডেল ইভিএম’ দিয়ে এ দিন ভোটারদের দেখানোর ব্যবস্থাও ছিল।
জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি মোহন গাঁধী জানান, গত নির্বচনে গড় ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল জেলায়। কিন্তু, জেলার প্রায় ১৮০টি জায়গায় শতাংশের হিসাবে কম ভোট পড়েছিল। সেই এলাকা চিহ্নিত করে ও অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগে ভোটারদের কীভাবে সচেতন করে বুথমুখী করা যায়, সেই মর্মে সংশ্লিষ্ট বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। খয়রাশোল যে ভাবনা নিয়েছে তা প্রশংসনীয় বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
নাটক শেষে বৃদ্ধা প্রতিমা দে, বধূ রুচি দে, নতুন ভোটার রমা ধর, মনোজ দে-রাও বলছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই ভোট দেব। নাটকটা বেশ ভাল লাগল।’’