Amit Shah

অমিত-কথায় চাঙ্গা বিজেপি, গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল

গেরুয়া শিবিরের তৎপরতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০৩:৩৫
Share:

অমিত শাহ। ফাইল চিত্র

‘ভার্চুয়াল’ সভায় ভাষণে বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষনেতা তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর ‘অনলাইন’ ভাষণ বিজেপি কর্মীদের বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নামতে রসদ যোগাবে বলে মনে করছেন দলের বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ দলের সব নেতা-কর্মীকে এক সুতোয় গেঁথেছে। যদিও গেরুয়া শিবিরের তৎপরতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে দুই জেলায় তিনটি লোকসভা আসনে বড় ব্যবধানে জেতেন বিজেপির প্রার্থীরা। ভরাডুবির পরে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়ে তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামে তৃণমূল। পুরুলিয়ায় ‘বুথ’ভিত্তিক পাল্টা কর্মসূচি শুরু করেছিল বিজেপিও। তবে করোনা-সংক্রমণের জন্য ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার পরে, পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হয়। তবে রাজ্য বিজেপির সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার নেতাদের গুরুত্ব পাওয়ার ঘটনা দলকে ‘বাড়তি অক্সিজেন’ দেয়। মঙ্গলবার অমিত শাহের ‘অনলাইন’ সভার পরে বিজেপি ফের একাধিক কর্মসূচি নেওয়ার রাস্তায় হাঁটছে।

বুধবার সকালেই ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’-এর মাধ্যমে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দলের মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেলে বাঁকুড়ায় দলীয় কার্যালয়ে দলের কোর কমিটির বৈঠক হয়। আগামী ১৫ জুন থেকে বাড়ি-বাড়ি জনসংযোগ গড়ার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। এ দিনের বৈঠকে ওই বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিটি বুথ ও মণ্ডল নেতৃত্বকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন বিবেকানন্দবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘অমিতজির জনসভাকে সফল করতে মাঠে নেমেছিলাম আমরা। লক্ষ্য ছিল, জেলায় এক লক্ষ মানুষকে ভার্চুয়াল সভায় আনব। হিসাব বলছে, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের কাছে আমরা পৌঁছতে পেরেছি। মনোবল বেড়েছে।”

Advertisement

লোকসভা ভোটে ভাল ফলের পরে বাঁকুড়ায় মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে ‘কোন্দল’ দেখা দেয় বিজেপিতে। দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বহু এলাকায় প্রকাশ্যে আসে সেই ‘কোন্দল’। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা বহু কর্মী ফের পুরনো দলে ফিরে যান। অমিত শাহের সভা দলের মধ্যে ‘বিভাজন’ মুছে দেবে বলে আশা নেতৃত্বের। যদিও বিবেকানন্দবাবুর দাবি, “আমাদের দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কিছু নেই। গণতান্ত্রিক দলে কর্মীদের নিজের মতামত তুলে ধরার অধিকার রয়েছে। এটা ফিরে তাকানোর সময় নয়। অমিতজির বক্তব্যে কর্মীরা বুঝেছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এই রাজ্যে জয়লাভ বড় চ্যালেঞ্জ। সকলে একজোট হয়েই লড়ছেন।"

বিবেকানন্দবাবুর সুরেই কথা বলেছেন বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘অমিতজির সভা গোটা জেলায় আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের এক সূত্রে বেঁধে দিয়েছে।’’ রাজ্যের ন’টি জেলায় অমিত শাহের ‘ভার্চুয়াল’ সভার প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে তিন লক্ষের বেশি মানুষ অমিতজির বক্তৃতা শুনেছেন।’’

বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা জেলা কমিটির সম্পাদক আবদুল আলিম আনসারির দাবি, ‘‘এই সভা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। সব উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ সভা শুনেছেন।’’

পুরুলিয়া বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী কর্মসূচি নিয়ে এ দিন বিকেলে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে জেলা নেতাদের ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’ হয়েছে।

তবে বিজেপি সূত্রের খবর, পুরুলিয়াতেও ‘কোন্দল-কাঁটা’ বিঁধে রয়েছে সংগঠনে। লকডাউন-এর আগে পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নিজেদের ‘বিক্ষুব্ধ’ বিজেপি নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে ‘বিজেপি-বাঁচাও’ সভা করেছিলেন কিছু লোকজন। সেখানে দলের বর্তমান জেলা নেতৃত্বকে আক্রমণও করা হয়।

তার আগে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পুরুলিয়ায় দলের জেলা স্তরের একটি সাংগঠনিক বৈঠকে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনাও ঘটে। যদিও বিদ্যাসাগরবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলে মত প্রকাশের অধিকার সকলের রয়েছে। তবে সবটাই হবে দলের শৃঙ্খলা মেনে। যাঁরা ও সব করেছিলেন, তাঁরা তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। আগেই বলেছিলাম, তৃণমূলের ইন্ধনে ওই সব হয়েছে।’’

অমিত শাহের ‘ভার্চুয়াল’ সভাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যালের মন্তব্য “লোকসভায় কিছু মানুষ ভুল বুঝে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের সমর্থন ফিরে পেয়েছি। জেলায় সাংগঠনিক ক্ষমতা বিজেপির নেই। আগামী দিনেও থাকবে না।”

তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘ভার্চুয়াল সভা করে কিছু হবে না। রাজ্যের মানুষ জানেন, কোন দল তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। কর্মীদের ধরে রাখতে বিজেপি ও সব করছে। তাতে লাভ নেই। সব জায়গায় এখন বিজেপি ছেড়ে মানুষ তৃণমূলে আসছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement