ঝঞ্ঝাট: বালিচাপা বিস্ফোরক। নিজস্ব চিত্র
থানা চত্বরের একপাশে বালির স্তূপ। তার মধ্যে গাঁথা লাঠিতে সাঁটা রয়েছে বিজ্ঞপ্তি— ‘সাবধান। বিস্ফোরক রয়েছে’। প্রহরীর কড়া নজর, কেউ যাতে ধারেকাছে না ঘেঁষে। তার পরেও, কাজেকর্মে থানায় এসে ওই দিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন কেউ কেউ। কড়া নজর রাখতে হচ্ছে ওসি রামনারায়ণ পালকে। ওন্দা থানার পুলিশ মহলে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে। কবে বিদায় হবে ওই ‘ঝঞ্ঝাট’?
মাসখানেক আগে ওন্দার কমলা এলাকায় একটি নির্মাণকাজ চলছিল। মাটি খুঁড়তে গিয়ে ফুট চারেক নীচে শ্রমিকেরা একটি গ্রেনেড পান। দেখে মনে হয়, বহু বছরের পুরনো। মরচে পড়ে গিয়েছে। লিভারটিও নেই। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গ্রেনেড উদ্ধার করে। কিন্তু তার পর থেকে পুলিশেরই অবস্থা হয়েছে ঢেঁকি গেলার মতো।
আপাতত থানা অফিস লাগোয়া স্টোর রুমের পাশে বালি-চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে গ্রেনেডটি। কিছু দিন আগেই সিআইডির পুরুলিয়া বম্ব স্কোয়াডের লোকজন এসেছিলেন। কিন্তু গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করা যায়নি। জেলা পুলিশকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানাচ্ছেন, সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে তাঁরা কবে আসবেন, সেটা এখনও জানা যায়নি।
কী ভাবে গ্রেনেডটি মাটির তলায় পৌঁছল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দীর্ঘ সময় ধরে মাটি চাপা থাকায় গ্রেনেডটির রঙ বদলে গিয়েছে। কোথায় কবে সেটি নির্মাণ হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানা যাচ্ছে না। এক সময়ে ওন্দার দুবড়াকোন এলাকায় ইংরেজ মিলিটারির ক্যাম্প ছিল। কমলা এলাকায় যে রাস্তার পাশে ওই গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে, সেই রাস্তাটিও তখন পরিচিত ছিল মিলিটারি রোড হিসেবে। পুলিশের অনুমান, গ্রেনেডটি হয়তো ওই সেনার ছিল। রাস্তার পাশে ফেলে গিয়েছিল তারা। তার পরে কেউ মাটি চাপা দিয়েছিল, না পরতে পরতে মাটি জমেছিল উপরে— সেটা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা।
চার বছর আগে পাত্রসায়র থানার শালঘাটা এলাকায় দামোদরের চরে বড় বড় চারটি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল। সে বারও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছিল। সেনা দেখেশুনে জানিয়েছিল, সেগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের বোমা। দামোদরের আশপাশের গ্রাম ফাঁকা করে অন্য বিস্ফোরকের সাহায্যে বোমাগুলি ফাটানো হয়েছিল। পুলিশের অনুমান, কমলায় উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডটিও দীর্ঘ দিনের পুরনো হওয়ায় সেটিকে নিষ্ক্রিয় করতেও অন্য বিস্ফোরকের সাহায্য নিতে হতে পারে। কারণ, সেটির যা অবস্থা, তাতে ফাটানো মুশকিল।
তবে ওন্দা থানা কোনও রকমের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘বলা তো যায় না, কখন কী থেকে কী হয়ে যায়! দ্রুত এটার একটা গতি হলে স্বস্তি পাই।’’ এখন তাঁদের কাজ হয়েছে, বালির স্তূপের দিকে কেউ ঘেঁষলেই বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়া। পুলিশের সংসার থেকে গ্রেনেড কবে বিদায় নেয়, সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছে ওন্দা।