বৃদ্ধার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন ট্যুরিস্ট গাইড। বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র
বয়স নব্বই পেরিয়েছে। মন্দিরের চাতালে বসে থাকেন ভিক্ষার আশায়। মন্দিরদর্শনে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ ইচ্ছা হলে তাঁর হাতে দুয়েক টাকা গুঁজে দেন। বছরের পর বছর এভাবেই কেটে যায় বিষ্ণুপুর শহরের লালজু মন্দির সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শতদল আঢ্যর। রবিবার এক আগন্তুক ওই বৃদ্ধার কাছে এসেছিলেন। তারপর যা ঘটেছে তা শতদলের কাছে এক কল্পকাহিনী। হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘‘এত দামী স্বপ্ন কোনও দিন দেখিনি।’’
ঘটনাটা কী?
অন্যদিনের মতো এদিনও বিষ্ণুপুরের রাজদরবার সংলগ্ন এলাকার লালজু মন্দিরের চাতালে বসেছিলেন শতদল। হঠাৎই এক আগন্তুক এসে তাঁর হাতে গুঁজে দিলেন নগদ ৬ হাজার টাকা। এত টাকা একসঙ্গে কোনও দিন স্পর্শ করেননি শতদল। তাই বিস্ময়ের ঘোর কাটতে সময় লেগেছিল অনেকটা। তারপর ওই ব্যক্তি শতদলদেবীকে যা শোনালেন তা ওই বৃদ্ধার কাছে ‘কল্পকাহিনীর’ থেকে কম কিছু নয়। আগন্তুক জানালেন, সম্প্রতি আমেরিকা থেকে বিষ্ণুপুরে মন্দির দর্শনে আসা এক অনাবাসী ভারতীয় ক্যামেরার লেন্সে বন্দি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। তিনিই শতদলদেবীর জন্য পাঠিয়েছেন নগদ ৬ হাজার টাকা।
মাস খানেক আগে বিষ্ণুপুর এসেছিলেন পেশায় আলোকচিত্রী অনিরুদ্ধ। কর্মসূত্রে বাবা মার্কিন মুলুকে থাকায় তিনিও এখন সেখানে থাকেন। মাস খানেক আগে অনিরুদ্ধ দেশে ফিরেছেন। তারপর বিষ্ণুপুরের লালজু মন্দির, রাজদরবার, পাথর দরজার মতো ইতিহাস সম্বৃদ্ধ স্থানগুলির ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে এসেছিলেন তিনি। তখনই মন্দিরের চাতালে বসে থাকা শতদলদেবীর ছবি উঠে আসে তাঁর লেন্সে।
রবিবার দিল্লি থেকে ফোনে অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘আসলে আমি ওঁর ছবি তুলতে চাইনি। ফ্রেমে ওঁকে দেখে কেন জানি না আমার মনে হয়েছিল, বিষ্ণুপুরের অনেক মন্দিরের মত উনিও জীর্ন। তখন আমি তাঁর হাতে কিছু টাকা দিয়েছিলাম।’’
দিল্লি ফিরে অনিরুদ্ধবাবু তাঁর টুরিস্ট গাইডের অ্যাকাউন্টে ওই বৃদ্ধার জন্য ৬ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। তাঁরই নির্দেশ মতো এদিন ট্যুরিস্ট গাইড অচিন্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায় শতদলদেবীর হাতে অনিরুদ্ধবাবুর পাঠানো অর্থ তুলে দেন। হাতে ৬ হাজার টাকা পেয়ে কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওই বৃদ্ধা। ঘোর কাটার পর বললেন, ‘‘একসঙ্গে এতগুলো টাকা দেখিনি কোনও দিন। বুকটা ভরে গেছে। এখান থেকেই অনিরুদ্ধবাবুকে আশীর্বাদ করছি।’’
ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, অর্থের অভাবে তিনি চোখ দেখাতে পারেননি। তাঁর ছেলে নালা নর্দমা থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে বিক্রি করে। নাতি একটি দোকানে চাকরি করে। তিনি বলেন, ‘‘পুত্রবধু পরিচারিকার কাজ করে বলে দু’মুঠো খেতে পাই। আমি তো কিছুই দিতে পারিনি সংসারে। শহরের এক বাবু আমার জন্যে টাকা পাঠিয়েছে শুনে আনন্দে বুকটা ভরে গেল।’’