হালহদিস: বিস্ফোরণের তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সোমবার মল্লারপুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
ক্লাবে বিস্ফোরণের ঘটনার পরেই সরিয়ে দেওয়া হল মল্লারপুর থানার ওসি-কে। সোমবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ক্লাবে এসে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে, মল্লারপুর বাজারের মতো জনবহুল এলাকায় একটি পুরনো ক্লাবে বিস্ফোরণ রহস্যের জাল এখনও কাটেনি। কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল কিংবা কী ভাবে ও কেন এই বিস্ফোরণ— এ সব কিছুই ধোঁয়াশায় মোড়া। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটকও করেনি পুলিশ। তবে, ক্লাবের কয়েক জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে তিন তলা ওই ক্লাবের নীচের তলায় বিস্ফোরণ ঘটে। ক্লাবের দেওয়াল উড়ে যায়। ক্ষতি হয়েছে আরও অনেক। এই বিস্ফোরণ ঘিরে নানা প্রশ্ন ঘুরছে এলাকায়। রবিবার রাতেই অবশ্য মল্লারপুরের ওসি টুবাই ভৌমিককে সরিয়ে মহম্মদবাজার থানার ওসি বৃকোদর সান্যালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রবিবারই পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছিলেন, ফরেন্সিক দল তদন্তে আসবে। সেই মতো সোমবার দুপুরে ওই ক্লাবে আসেন কলকাতার বেলগাছিয়ায় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির দু’জন বিশেষজ্ঞ। এই নিয়ে এলাকাবাসী থেকে ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে কৌতূহল ছিল।
সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন ক্লাবের সামনে মোতায়েন ছিলেন অনেক পুলিশকর্মী। বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ক্লাবে ঢোকেন।
সঙ্গে ছিলেন এসডিপিও (রামপুরহাট), সিআই (রামপুরহাট) এবং মল্লারপুর থানার নতুন ওসি। ভিতরে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, কতটুকু জায়গা নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে, বিস্ফোরণে ক্লাবঘরের কতটা ক্ষতি হয়েছে— এসব কিছুই খুঁটিয়ে দেখেছে ফরেন্সিক দল। বিস্ফোরণের উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ঘরে পড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত লোহার আলমারি, অন্যান্য আসবাবপত্র এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজপত্রও পরীক্ষা করে দেখেন।
এমনকি বিস্ফোরণস্থলের মাটিও তাঁরা কোদাল দিয়ে খুঁড়ে পরীক্ষা করে দেখেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ক্লাবঘর ও ঘরের পিছনে পরীক্ষা করার পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল ছাড়েন। তারই মাঝে জেলা পুলিশ সুপার ক্লাবঘরে এসে ফরেন্সিক দলের তদন্তে সহযোগিতা করেন।
পরবর্তীতে পুলিশ সুপার জানান, ফরেন্সিক দলের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে ব্যপারে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে পুলিশ ও দমকলের অভিযোগ এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে তদন্তের দাবি— সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং পুড়ে যাওয়া ক্লাবের নীচের তলায় রাখা লোহার আলমারির টুকরো, কাঠের টেবিলের অংশ, কাঠের টুকরো, ক্ষতিগ্রস্ত ওজন মেশিনের অংশ প্রভৃতির নমুনা সংগ্রহ করে বাজেয়াপ্ত করেছে। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা, ব্যাপকতা দেখে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মজুত বিস্ফোরক থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ক্লাবঘরের লোহার শাটার প্রায় ২০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে।
পুলিশ ইতিমধ্যে ক্লাবের একাধিক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সূত্রের খবর, ক্লাবে বহিরাগতেরা আসত কিনা, তা তাঁদের কাছে পুলিশ জানতে চেয়েছে। বাইরের যাঁরা ক্লাবে নাচ, জিম বা যোগাসনের প্রশিক্ষণ দিতে আসেন বা দুঃস্থদের কোচিং করাতে আসেন, তাঁদের কোনও পরিচয়পত্র ক্লাবে আছে কিনা, জানতে চাওয়া হয়েছে তা-ও। ক্লাবের সদস্যরা অবশ্য বহিরাগতদের কোনও পরিচয়পত্র নিতেন না বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন।
ক্লাবের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেখর গুপ্ত, সম্পাদক গৌতম রায় জানান, পুলিশ ঘটনার রাতে ক’টা পর্যন্ত ক্লাব খোলা ছিল, নীচের তলার ঘরই ক্লাবের সদস্যেরা কেন অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন, এ সবও জানতে চেয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায় রামপুরহাটে এসে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অভিযোগ করেন, ‘‘মল্লারপুরের ওই ক্লাবটা বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের কাছে খবর ছিল, ওই ক্লাবে ঝাড়খণ্ড থেকে এনে বোমা মজুত করা আছে।’’
এই অভিযোগ মানতে নারাজ ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশ। ক্লাবের সদস্যদের কথায়, ‘‘পুলিশি তদন্তে আমরা সব রকম সাহায্য করতে রাজি। তবে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করুক, এটাই আমরা চাই।’’