ফাইল চিত্র।
স্নাতক স্তরে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়াশোনায় ছাড়পত্র দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলিতে এ বার সেই সুযোগ মিলবে। অতিথি শিক্ষকও নেওয়া হচ্ছে। তবে ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই সিলেবাস সাঁওতালি মাধ্যমে অনুবাদ করাটা এখন বড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বড় পরীক্ষা।
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে প্রাথমিক স্তরে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠন শুরু হয়। ২০১৮ সালে প্রথম মাধ্যমিক এবং এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা। সূত্রের খবর, বাঁকুড়া জেলায় তেমন প্রায় ৭২ জন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে কলেজে সাঁওতালি মাধ্যম চালু না থাকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন। সমস্যা মেটাতে কলেজে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালুর দাবি উঠছিল। অগস্টে উচ্চশিক্ষা দফতর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঝাড়গ্রামের লালগড় গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ানোর ছাড়পত্র দেয়। গত ২২ অগস্ট থেকে সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরু হয়েছে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠ্যক্রম অনুবাদের কাজ।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উচ্চশিক্ষা দফতর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা চালু করার অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” তিনি জানান, দর্শন, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্ক— এই পাঁচটি বিষয় সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ানো হবে। ওই বিষয়গুলি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের বই সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে। উপাচার্য জানান, আপাতত অলচিকি হরফ জানা ও নূন্যতম ৫৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করা ব্যক্তিদেরই অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে এত বড় পাঠ্যক্রম অনুবাদ করতে গিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। উপাচার্য বলেন, “সাঁওতালি মাধ্যমের সিলেবাস অনুবাদের জন্য ওই ভাষা জানা জেলার নানা কলেজের শিক্ষক এবং রাজ্যের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষেরও সাহায্য নিচ্ছি আমরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলেবাস অনুবাদ করার কাজ শেষ করাটাই এখন মূল লক্ষ্য।”
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঁকুড়া জেলা ‘গডেৎ’ বিপ্লব সরেন বলেন, “স্নাতক স্তরে সাঁওতালি মাধ্যম চালু করার জন্য আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। সেই দাবিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কয়েকশো ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার পথ মসৃণ হয়েছে। আমরা খুবই খুশি।” এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে সাঁওতালি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম বাঁকুড়ার হিড়বাঁধের তিলাবাইদ গ্রামের বাসিন্দা অমরদীপ টুডু। তিনি বলেন, “সাঁওতালি মাধ্যমে পড়াশোনার পরে বাংলা মাধ্যমে ফিরে আসতে গেলে খুবই সমস্যায় পড়তাম। স্নাতক স্তর পর্যন্ত সাঁওতালি মাধ্যম চালু হওয়ায় আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি।”