পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লুঠের ঘটনার জেরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার এক পুলিশকর্মীকে ক্লোজ করলেন জেলা পুলিশ সুপার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার অর্থাৎ যে রাতে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের ধারে রামকৃষ্ণ মিশন লাগোয়া এলাকায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির বিবেকানন্দ নগর শাখায় টাকা লুঠের ঘটনা ঘটে, সে রাতে ওই এলাকায় টহলদারির দায়িত্বে ছিলেন তপন তিওয়ারি নামের মফস্সল থানার এক পুলিশকর্মী।
গভীর রাতে ব্যাঙ্কের পিছনের জানলার রড ভেঙে ভিতরে ঢুকে সাইরেনের তার কেটে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার পরে লোহার ভল্ট কেটে অবাধে লুঠ চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ২২ লক্ষ টাকারও বেশি লুঠ হয়েছে বলে রবিবার ব্যাঙ্ক সূত্রে জানানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ কর্তাদের মনে হয়েছে, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় একাধিক ছিল। রাজ্য সড়কের পাশে থাকা ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুষ্কৃতীরা অপারেশন চালিয়েছে, অথচ তা নজরদারির দায়িত্বে থাকা পুলিশের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে, এই প্রশ্নও উঠেছে এলাকায়। পাশাপাশি উঠেছে নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টিও। সোমবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই ঘটনার জেরে এক তপন তিওয়ারি নামে এক পুলিশকর্মীকে ক্লোজ করা হয়েছে। তিনি সেদিন ওই এলাকায় টহলদারির দায়িত্বে ছিলেন।’’
শনিবার রাতে এই লুঠের ঘটনার পরে রবিবার ব্যাঙ্কে যান পুলিশ সুপার নিজেও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের যে ভল্টে এত পরিমাণ টাকা রাখা ছিল, সেই ভল্ট অনেক পুরনো। এখন আধুনিক ভল্ট এসেছে। আমরা নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে সব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই ব্যাঙ্কের ভিতরে আধুনিক ভল্ট রাখার জন্য চিঠি দিচ্ছি।’’ তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, এই ব্যাঙ্কে না আছে রক্ষী, না রয়েছে সিসিটিভি। অথচ, সিসিটিভি-র ফুটেজ যে দুষ্কৃতীদের ধরিয়ে দিতে কতটা সাহায্য করে, সম্প্রতি রানাঘাট-কাণ্ড থেকেও তার প্রমাণ মিলেছে। কলকাতা এবং অন্য জেলার একাধিক গয়নার দোকান লুঠের কিনারা করতেও সিসিটিভি-র ফুটেজ পুলিশের সহায়ক হয়েছে। পুরুলিয়ার এক পুলিশ কতার্র কথায়, ‘‘এই ব্যাঙ্কেও সিসিটিভি থাকলে শনিবার রাতে ক’জন দুষ্কৃতী সেখানে ঢুকেছিল, তাদের মধ্যে কেউ দাগি দুষ্কৃতী কিনা, সে-সব চিহ্নিত করতে আমাদের কিছুটা সুবিধা হত।’’
পুলিশ সুপারও বলছেন, ‘‘সিসিটিভি থাকলে কিছু সূত্র তো মিলতে পার। তা ছাড়া, এই ব্যাঙ্কে সাইরেনের তারও প্রকাশ্যে ছিল। এই তার গোপন জায়গায় থাকলে সহজে দুষ্কৃতীরা কাটতে পারত না। এবং সাইরেন সে ক্ষেত্রে আরও বেশিক্ষণ ধরে বাজতে পারত।’’ রাতে ব্যাঙ্কের সাইরেন টানা বেজে উঠলে রাস্তায় টহলদারির দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের কাছে সেই শব্দ পৌঁছত বলেও মনে করেন পুলিশ সুপার।
যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় লুঠের ঘটনা ঘটেছে, সেটির রিজিওনাল ম্যানেজার অসিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এখনও পুলিশ সুপারের কাছ থেকে এ রকম কোন চিঠি পাইনি।’’ চিঠি পেলে পুরনো ভল্টের বদলে আধুনিক ভল্ট রাখার কোনও ভাবনা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে অসিতবাবু জানান, এ সম্পর্কে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ব্যাঙ্কে সিসিটিভি না থাকার প্রশ্নে তাঁর আবার বক্তব্য, ‘‘সিসিটিভি থাকলেই বা কী হত? এই তো নদিয়ার একটি শাখায় সিসিটিভি-র হার্ড ডিস্কটাই দুষ্কৃতীরা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। এখানেও সে রকম কিছু করে যেতে পারত। তা হলে আর পুলিশ কী সূত্র পেত? আমরা আমাদের সাধ্যমতো নিরাপত্তা রেখেছিলাম। তার মাঝেই এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’
অন্য দিকে, রবিবার সাতসকালে পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধ এলাকায় এক ব্যবসায়ীর মোটরবাইক ও টাকা লুঠের ঘটনায় কিছু সূত্র পেয়েছে বলেও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।