স্বমহিমায় কেষ্ট। নিজস্ব চিত্র।
এত দিন বিরোধীদের ভোটে দাঁড়াতেই দেবেন না বলে হুমকি দিচ্ছিলেন। এ বার তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক দল থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের বিতর্কে জড়ালেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
রবিবার রামপুরহাটে ছিল তৃণমূলের বীরভূম জেলা সংখ্যালঘু সেলের জেলা সম্মেলন। সেখানেই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বলতে উঠে অনুব্রত দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমরা ভোটে কাউকে দাঁড়াতে দেব না। বিরোধীদের দাঁড়ানোর কোনও জায়গাই নেই। রোজগার করারও কোনও জায়গা নেই। উন্নয়নের জন্য ওদের কাউকে ভোট করতে দেব না। একটাই দল থাকবে, সেটা তৃণমূল।’’ ক’দিন আগে হওয়া কলেজ-ভোট থেকেই বিরোধীদের লড়তে না দেওয়ার এই ‘স্ট্রাটেজি’ সফল ভাবে করে দেখিয়েছে তৃণমূল। বীরভূমের ১৬টি কলেজের কোনওটিতেই বিরোধী ছাত্র সংগঠনেরা মনোনয়নই তুলতে পারেনি। একই ছবি দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু স্কুল, সমবায় নির্বাচনেও। কেষ্টদা তখনই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন, ‘‘এটা পঞ্চায়েত ভোটের ট্রেলার! এই মডেলেই পঞ্চায়েত ভোট হবে।’’
মনোনয়নই তুলতে না দেওয়ার কেষ্টদার এই মডেল অবশ্য বীরভূমে নতুন নয়। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মনোনয়ন-পর্বের আগে থেকেই অনুব্রত বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে না দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে দেখা গিয়েছিল। সে বার শাসকদলের বিরুদ্ধে বীরভূমে এক তরফা ভোট করানোর অভিযোগ উঠেছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, বীরভূমের ৪২টি জেলা পরিষদ আসন, ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৬৭টি পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখলই যে এ বার একমাত্র লক্ষ্য— ক’দিন আগে সিউড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের অন্য একটি অনুষ্ঠানে তা স্পষ্ট করেছিলেন অনুব্রত। সে দিনও তাঁর হুঙ্কার ছিল, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে অন্য দলের প্রার্থী থাকবে না। থাকবে শুধুমাত্র মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল— তৃণমূল।’’
অনুব্রতর বিরুদ্ধে বারবারই প্রকাশ্যে বিরোধীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি পুলিশকেও বোমা মারার হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশের দিক থেকে তথ্য প্রমাণের অভাবে কেষ্টদা অবশ্য সদ্য ‘বেকসুর’ খালাস হয়েছেন। তার পরে ফের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে পঞ্চায়েত ভোটের মহড়া শুরু করে দিয়েছেন কেষ্টদা। দলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ এক নেতার টিপ্পনি, ‘‘এ আসলে ময়দানে নামার আগেই প্রতিপক্ষের উদ্দেশে দাদার ‘স্লেজিং’ মাত্র!’’
তৃণমূল নেতারা যা-ই বলুন, অনুব্রতর ওই হুঙ্কারকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনে একটিই দল থাকবে— এই হুঙ্কার একনায়কতন্ত্রের পরিচয় দেয়। আমাদের দেশের গণতন্ত্র তার সম্পূর্ণ বিরোধী। একনায়কতন্ত্র মাথায় চড়ে বসে কী করতে পারে, সেই ধারণা সাধারণ মানুষের আছে। মানুষ যে মনেপ্রাণে ওদের সঙ্গে নেই, তা বুঝতে পেরেই ওরা ভয় পেয়ে হুঙ্কার ছাড়ছে।’’