সিউড়ির তিলপাড়া জলাধারের জল কম থাকায় জেগে উঠেছে চর শীতে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখির দল।
সংস্কারের জন্য জল ছেড়ে দেওয়ায় শুকিয়ে গিয়েছে তিলপাড়া ব্যারাজ। ফলে, প্রতি বছর শীতে যে পরিযায়ীদের দেখা মিলত তিলপাড়ায়, এ বার সে দৃশ্য অমিল। পরিবর্তে সিউড়ি সংলগ্ন নীল নির্জন জলাধরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। এর প্রভাবে আগামী শীতেও তিলপাড়াকে পরিযায়ী পাখিরা এড়িয়ে যাবে কি না, তা ভাবাচ্ছে পরিবেশবিদদের।
পরিবেশবিদেরা জানান, ভারতের উত্তর থেকে শীতের শুরুতে বহু পাখি গাঙ্গেয় সমভূমির দিকে উড়ে আসে। এদের মধ্যে ‘বার হেডেড গুজ’ (দাগি রাজহাঁস), রেড ক্রেস্টেড পচারড (রাঙা মুড়িহাঁস), বিশেষ প্রজাতির পানকৌড়ির মতো পাখিরা প্রতি বছর তিলপাড়া ব্যারাজ, নীল নির্জন জলাধার, বল্লভপুর অভয়ারণ্যে আসে। নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতে শুরু করে। এ বছর সার্বিক সংস্কারের জন্য ময়ূরাক্ষীর তিলপাড়া ব্যারাজের সমস্ত জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, পরিযায়ী পাখিরা বিকল্প জায়গার খোঁজ করছে।
পরিবেশবিদ তথা বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাস জানান, বিশেষ কোনও কারণ না-ঘটলে প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিরা নির্দিষ্ট সময়ে একই জলাশয়ে ফিরে আসে। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি বদলেছে। তিলপাড়া থেকে ফিরে যাচ্ছে সমস্ত পাখিরা। তারা আশেপাশের বিভিন্ন জলাশয়ে যেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ওই জলাশয়ে যে পরিযায়ী পাখিরা প্রতি বছর আসছে, তাদের সঙ্গে খাবার ও বাসস্থান নিয়ে নতুন পাখিদের সংঘাতের পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। এ অভিজ্ঞতা থেকে আগামী দিনে পরিযায়ী পাখিরা আবার নতুন করে ব্যারাজে ফিরবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ব্যারাজের সংস্কার জরুরি ছিল। পরিবেশের ভারসাম্যও জরুরি। সব কিছু ঠিক ভাবে হয়ে যাওয়ায় পরে আগামী বছর কী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সে দিকে আমাদের নজর থাকবে।”
সিউড়ির বাসিন্দা সুদীপ্তা আচার্য, তন্ময় দাসেরা জানান, শীতকালে তিলপাড়া ব্যারাজে বেড়াতে আসার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল পরিযায়ী পাখি দেখা এবং তাদের ছবি তোলা। কিন্তু এ বছর সে আনন্দ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন। তাঁদের আশা, আগামী শীতে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে।