শান্তিনিকেতনে খোয়াইয়ের হাটে ভিড় পর্যটকদের। শনিবার বিকেলে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
আশঙ্কা ছিলই। তা সত্যি করেই বড়দিনে প্রবল ভিড়ে ধুয়েমুছে গেল কোভিড বিধি। রাজ্য ইতিমধ্যেই ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। সেই পরিস্থিতিতে এমন ভিড় দেখে উদ্বেগে চিকিৎসকদের অনেকেই।
একে বড়দিন, তায় সপ্তাহান্ত। আবার এই সময়েই বোলপুরে চলছে বিকল্প পৌষমেলা। সব মিলিয়ে শনিবার বোলপুর-শান্তিনিকেতনে পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, সবার মধ্যেই ছিল উৎসবের মেজাজ। এ দিন বোলপুরের গোয়ালপাড়ার কাছে কোপাই নদীর তীরে ধনুকতলায় গিয়ে দেখা গেল বড়দিন উপলক্ষে পিকনিকে মেতে উঠেছেন জেলার বিভিন্ন এলাকা-সহ পড়শি জেলা থেকে আসা পর্যটকেরা।
ইলামবাজারে অজয় নদের পাড়েও ছিল একই দৃশ্য। চড়ুইভাতিতে ছিল শব্দ-দানবের তাণ্ডবও। ডিজে বক্স বাজিয়ে উদ্দাম নাচে মেতে উঠতে দেখা যায় চড়ুইভাতি করতে আসা বাসিন্দাদের।
শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের হাটে এ দিন পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় হয়। পৌষ উৎসব দেখতে শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহের বাইরে অবধি ভিড় জমে যায়। একই সঙ্গে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে বিকল্প পৌষমেলা চলতে থাকায় সেখানেই জড়ো হন পর্যটকেরা। সন্ধ্যায় বিকল্প পৌষমেলার মাঠ ছিল কানায় কানায় ভরা। মাস্ক ছিল না অনেকের মুখেই। পর্যটকদের চাপ এত বেশি ছিল যে বোলপুর থেকে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার রাস্তা যানজটে থমকে যায়। আনন্দ হই-হুল্লোড়ে মেতে থাকা বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘মাস্ক পরিনি এমন নয়, কিন্তু সব সময় মুখে মাস্ক রাখা সম্ভব হয়নি।’’
জেলায় পর্যটকদের আরেক গন্তব্য তারাপীঠেও ছিল বিধি ভাঙার ছবি। তারাপীঠ মন্দিরে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় হয়। মন্দির সংগগ্ন রাস্তায় রীতিমতো ঠেলাঠেলি হয় ভিড়ের চাপে। কোভিড বিধি পালনের বালাই অবশ্য ছিল না সেখানেও। অধিকাংশ পর্যটকদের মুখে মাস্কের ব্যবহার ছিল না। মন্দির চত্বরেও পারস্পরিক দূরত্ব বিধি পালন করতে দেখা যায়নি কাউকেই। বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের ভিড়ের চাপে মন্দির চত্বর ছাড়াও তারাপীঠ ঢোকার মুখে দ্বারকা সেতুর উপর টোটো, অটো, বাস সহ ভারী যানবাহন চলাচলে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট দেখা যায়।
তারাপীঠ ঢোকার আগে চিলার কাঁদর পাড়ে যেখানে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ ৫১ পীঠের আদলে মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সেই জায়গায় ৫টি দলকে বনভোজন করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিক্ষিপ্ত ভাবে বুঙ্কেশ্বরিতলা, বৈধরা এলাকায় বনভোজনকারীদের দল দেখা যায়। তবে কোনও জায়গাতেই কোভিড বিধি পালনের বালাই ছিল না। বনভোজনকারীদের মধ্যে মাস্কের ব্যবহার ছিল না। উল্টে ডিজে বক্সের উপদ্রব ছিল।
সিউড়ি শহর লাগোয়া তিলপাড়া জলাধার ও তসরকাটার জঙ্গলে প্রতি বারই বড়দিনে চড়ুইভাতির ভিড় জমে। এ দিন অবশ্য তিলপাড়ার থেকে অনেকটা বেশি ভিড় হয়েছিল তসরকাটা জঙ্গলে। দু’জায়গাতেই চড়ুইভাতি করতে আসা পর্যটকদের মুখে মাস্কের বালাই ছিল না। দূরত্ব বিধিরও তোয়াক্কা করেননি কেউ। সিউড়ির অরবিন্দপল্লি থেকে পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিলপাড়ায় চড়ুইভাতি করতে আসা সোমনাথ গড়াই বললেন, ‘‘ছুটির দিন বলে আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই মতো সকলে মিলে আনন্দ করতে এসেছি।’’ সিউড় শহরে একটি চার্চেও বড়দিনের সন্ধ্যায় প্রবল ভিড় হয়।