রামপুরহাটে দুয়ারে সরকারের শিবিরে ভিড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট হয়ে আহত, গরমে অসুস্থ, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঠাসাঠাসি ভিড়— জেলায় এমন ছবিই দেখা গেল দুয়ারে সরকারের প্রথম দিনে। প্রতিটি শিবিরে যে উপচে পড়া ভিড় হবে সেটা প্রত্যাশিতই ছিল প্রশাসনের কাছে। তা সত্যি করেই সোমবার জেলার শিবিরগুলিতে বিপুল ভিড় হয়েছে। সেই ভিড়ে কোভিড বিধি উপেক্ষিত থেকেছে অধিকাংশ শিবিরেই।
মুরারই পঞ্চায়েত এলাকায় আয়োজিত শিবিরে ভিড় ঠেলে এগোতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে জখম হন পাঁচ মহিলা। গরমে, ভিড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন। এ ছাড়া জেলার অন্য শিবিরগুলিতেও খুব কম সংখ্যক মানুষের মুখে মাস্ক ছিল। দূরত্ব বিধি মানার বালাই ছিল না। এই সব ঘটনায় প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলাশাসক বিধান রায় বলছেন, ‘‘ভিড় প্রত্যাশা করেই সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রতিটি শিবিরেই পর্যাপ্ত মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। ভিড় সামলাতে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। মুরারইয়ে ভিড়ে লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে একজন পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন বলে শুনেছি। তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। অতি উৎসাহের জন্য যেটুকু সমস্যা হয়েছে সেটা মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, নতুন কৃষক বন্ধুর মতো নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য তো বটেই, যোগ্য হওয়া সত্বেও এত দিন যাঁরা খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, জাতিগত শংসাপত্র, তফসিলি বন্ধু, জয় জোহার, মানবিক এবং ১০০ দিনের কাজের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা এ দিন আবেদন জানালেন।
শিবিরে আসা বাসিন্দারা জানান, আগের বারের সঙ্গে এ বার দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মৌলিক তফাত হল, গত বারে যে যে প্রকল্পের সুবিধা পেতে চান সেই টেবিলে সরাসরি পৌঁছে পূরণ করা আবেদনপত্র জমা দিতে পেরেছিলেন। এ বার প্রত্যেককেই প্রথমে রেজিষ্ট্রিশন করাতে হয়েছে। সেই রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পেলে সেটা আবেদনপত্রে উল্লেখ করে তবেই নির্দিষ্ট প্রকল্পে জন্য নির্দিষ্ট টেবিলে পৌঁছতে হয়েছে। এতে বেশ কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে জেলার প্রতিটি প্রশাসনিক শিবিরে প্রথম দিনই প্রচুর আবেদনপত্র জমা পড়েছে। মোট ১৮টি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দিতে আবেদন আহ্বান করা হলেও সবচেয়ে বেশি হিড়িক ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার। এই প্রকল্পে ২৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত মহিলাদের (যাঁরা সরকারি ভাতা বা বেতন পান না) প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতি মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা ও বাকি মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন।
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা মনে করাচ্ছেন, গত বারে প্রতিটি পরিবারকে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দেওয়ার প্রকল্পের মতই উদ্দীপনা ছিল। প্রায় ৭০ শতাংশ ভিড় ওই প্রকল্পের জন্যই। সেজন্য পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যেখানেই শিবির হয়েছে সেখানে অতিরিক্ত টেবিল দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড ও আধার কার্ড সঙ্গী করেই মহিলারা এ দিন লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আবেদন পত্র পূরণে সাহায্য করার লোকজন থাকলেও এ দিন গরম ও চূড়ান্ত আর্দ্রতায় কষ্ট পেয়েছেন সকলেই।
শিবিরে ভিড় নিয়ে শাসক দল তৃণমূলকে বিঁধেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘সামনে পুরভোট। সেদিকে লক্ষ্য রেখে মানুষকে প্রলোভিত করার জন্য এমন কর্মসূচি নিয়েছে শাসক দল। কিন্তু যে হারে ভিড় হচ্ছে তাতে করোনা সংক্রমণ বাড়তেই পারে।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, ‘‘ওরা আগে নিজেদের চরকায় তেল দিক। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে দিলীপ ঘোষেরা করোনা বিধি লঙ্ঘন করে একের পর এক কর্মসূচি নিচ্ছেন, তখন সেটা দোষের নয়?’’