শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসবে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহে একের পর এক শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত এক বছরে। এ বার সেই তালিকায় নাম লেখাল শ্রীনিকেতনের ঐতিহ্যশালী মাঘমেলাও। প্রতি বছর ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই মেলা আয়োজিত হলেও এ বার অতিমারির আতঙ্ক এবং পড়ুয়াদের অনুপস্থিতির দিকটি বিবেচনা করে মেলা না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে, শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে যে উৎসব আয়োজিত হয় প্রতি বছর, তা এ বারও হচ্ছে।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যাচ্ছে, শ্রীনিকেতনের প্রথম অধীক্ষক এলম্ হার্স্টকে কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘আশা করি সুরুলে তুমি একটি মেলা শুরু করবে...’। তারই ফলশ্রুতি, শ্রীনিকেতনের কৃষিমেলা। ১৯২২ সালের সেই ৬ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মূল সুরটিকে বজায় রাখতে রবীন্দ্রনাথ প্রতি বছর একটি গ্রামীণ কৃষি মেলার সূচনা করেন শ্রীনিকেতনে, যা ‘মাঘমেলা’ নামে সুপরিচিত। আশপাশের গ্রাম থেকে পসরা সাজিয়ে এই মেলায় আসেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি শ্রীনিকেতন সংলগ্ন গ্রামগুলির কৃষকদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এক মজার প্রতিযোগিতাও আয়োজিত হয় প্রতি বছর। বসে লোকগানের আসর। বীরভূমের কিছু একান্ত নিজস্ব পিঠের স্বাদও পাওয়া যায় এই মেলায় এলে।
এ বার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঘমেলার আয়োজন বন্ধ রাখতে হলেও ঐতিহ্য থেমে থাকেনি। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শ্রীনিকেতন পাকুরতলা থেকে কুঠিবাড়ি পর্যন্ত বৈতালিকের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৫টায় ওই একই পথে ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো’ গানের সহযোগে আবারও আয়োজিত হয় বৈতালিক। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ছাড়াও শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের দুইশতাধিক কর্মী, অধ্যাপক ও আধিকারিক যোগ দেন বৈতালিকে। বাজানো হয় মঙ্গলসূচক সানাই।
এ দিন সকাল ৯টায় বেদমন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে শ্রীনিকেতনের গুরুত্ব এবং রবীন্দ্র গ্রামোন্নয়নের ভাবনা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন উপাচার্য। সন্ধ্যায় নবগঠিত বিশ্বভারতী মহিলা সমিতির সদস্যারা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সন্ধ্যায় আলোকসজ্জাও আয়োজিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ দিন সকালে শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষেরা বিভাগীয় প্রতিবেদন পাঠ করেন। সাম্প্রতিক কালে যাঁরা বিশ্বভারতীতে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন, এমন ৬৫ জনের হাতে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে রবীন্দ্র প্রতিকৃতি ও ফুলের তোড়া তুলে দেন উপাচার্য।