গন্তব্য: রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি গ্রামের কাছে পাহাড়। ছবি: সঙ্গীত নাগ
লোকশিল্প থেকে পাহাড়-জঙ্গলের সৌন্দর্যের টানে পুরুলিয়ায় গত ক’বছরে পর্যটকদের যেন ঢল নেমেছে। কিন্তু এ বার সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণায় দেশের অন্যত্র পর্যটনের বিকাশে কিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হলেও পুরুলিয়ার উল্লেখ নেই। তাতে হতাশ এই জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
রাজ্যে পালাবদলের পরে পুরুলিয়ায় পর্যটনের পরিকাঠামো উন্নয়নে কিছু কাজ হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, রাজ্য সরকার সেই কাজ করছে। যদিও জঙ্গলমহল এলাকার বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর দাবি, প্রথম ইউপিএ সরকারের পর্যটন মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়কে তিনি অযোধ্যাপাহাড়ে এনেছিলেন। তিনিই পরে অযোধ্যাপাহাড়ের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করেন।
কিন্তু এ বারের বাজেটে পুরুলিয়ার পর্যটনের জন্য কী বরাদ্দ হয়েছে?— প্রশ্ন ছুড়ছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাঁদের আক্ষেপ, গত লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহল বিজেপির প্রার্থীদেরই সাংসদ নির্বাচন করে দিল্লিতে পাঠিয়েছেন। তারপরেও পর্যটনে কেন বঞ্চনা করা হল?
গত কয়েক বছরে রাজ্য সরকার পুরুলিয়ার পর্যটনে বিশেষ জোর দিয়েছে। এর ফলে অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট থেকে বড়ন্তি, মুরগুমা, কয়রাবেড়া, দোলাডাঙা, ফুটিয়ারি-সহ একের এক জায়গার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। হোটেল শিল্পে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগও হচ্ছে।
হোটেল শিল্পের সঙ্গে জড়িত রোহিত লাটার মতে, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষজন এই বাজেটে হতাশ। এমনিতে পর্যটনের বিকাশে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘আগে একটি তহবিল থেকে পর্যটনের বিনিয়োগের জন্য সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু তা কয়েক বছর ধরে বন্ধ। অন্য যে তহবিল রয়েছে, সেখান থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলিই সুবিধা পায়।’’ ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এ বার বাজেটে সরকার ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে একটি ট্রাইবাল মিউজিয়াম গড়ার প্রস্তাব জানিয়েছে। এ ছাড়া গুজরাত, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের পর্যটন বিকাশের কিছু প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের কোনও জায়গার নাম ঠাঁই পায়নি।
রোহিতবাবুর দাবি, ‘‘রাজস্থানে লোকশিল্পের টানে কত বিদেশি আসেন। পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলেও ছৌনাচ এবং লোক সংস্কৃতির নানা উপকরণ রয়েছে। সে সব ঘিরে লোকশিল্পমুখী পর্যটনের বিকাশে কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পনা নিলে এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিটাই বদলে যেত। পর্যটন শিল্পের বিকাশও হতো। এ বারের বাজেটে সেই দিশা তো পেলাম না।’’ আর ব্যবসায়ী নরেশ আগরওয়াল বলেন, ‘‘পর্যটন শিল্পে পুরুলিয়া এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সহায়তা করলে তা গতিময় হতে পারত।’’
নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং পটেলের সঙ্গে দেখা করে পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো চিঠি দিয়েছিলেন। তাতে দাবি করেছিলেন, বনবাসকালে অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন রাম-সীতা। সেই গুরুত্বের কথা জানিয়ে তিনি এখানকার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়েছিলেন। তার পরেও বাজেটে কেন পুরুলিয়ার নাম থাকল না— প্রশ্ন উঠেছে।
রবিবার বার বার ফোন করেও সাংসদকে পাওয়া যায়নি। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘আমাদের সরকার তফসিলিদের উন্নয়নে সচেষ্ট। এ বারের বাজেটে জেলার পর্যটনের উন্নয়নে কিছু না পাওয়া গেলেও সামনের বার যাতে হয়, আমরা সেই চেষ্টা করব।’’