ভিড় নেই। দোকানে কেবল ছোট কার্ড। কীর্ণাহারে। ছবি: কল্যাণ আচার্য।
আগের মত চাহিদা নেই। কেউ তেমন খোঁজও করেন না। তাই বিক্রেতারাও গত কয়েক বছর ধরে আর আনান না নতুন বছরের গ্রিটিংস কার্ড। বৃহস্পতিবার জেলা সদরের বাজার ঘুরে দেখা গেল গুটি কয়েক দোকানে রয়েছে গ্রিটিংস কার্ড। অধিকাংশ কার্ডই কেবল খুদেদের জন্য।
প্রযুক্তির যুগে চিঠির পাঠানোর রেওয়াজ আর নেই। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে নতুন বছরের শুভেচ্ছা সম্বলিত কার্ড দেওয়ার রেওয়াজও প্রায় বন্ধের পথে। এতেই আক্ষেপ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন অনেক কার্ড এমনও আসে যাতে বছর উল্লেখ থাকে না। যাতে পরের বছরও কার্ডগুলো বিক্রি করা যায়।
একটা সময় ইংরেজি নববর্ষের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন দোকানের বাইরে সাজানো থাকত বিভিন্ন ধরনের গ্রিটিংস কার্ড। দোকানের দিকে চোখ পড়লেই যেন মনে হত নতুন বছর আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই চিত্র যেন অমিল হয়ে উঠেছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, আগে ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের কার্ড খোঁজ করতেন। কেউ শিক্ষককে দেওয়ার জন্য, কেউ প্রিয় বন্ধুকে দেওয়ার জন্য, প্রেমিক বা প্রেমিকাকে দেওয়ার জন্যও অনেকে বাহারি, বড় কার্ডের খোঁজ করতেন। একসঙ্গে অনেক কার্ড নিয়ে যেতেন অনেকে।
গত কয়েক বছর ধরে আর সেই অর্থে কার্ডের খোঁজ করেননা কেউই। এখন সোশ্যাল মিডিয়া কিম্বা ফোনে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেন সকলেই। তাই গত দুবছর ধরে সেই অর্থে বড় কার্ড আর আনাতে চান না জেলা সদরের ব্যবসায়ীরা। খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে অবশ্য কার্ড দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই শহরের গুটি কয়েক ব্যবসায়ী খুদেদের জন্য কিছু গ্রিটিংস কার্ড আনিয়েছেন। আশা ছিল খুদেরা হয়তো খোঁজ করতে আসবেন। কিন্তু বছরের শেষ দিনেও সেই অর্থে ক্রেতার দেখা নেই। তাতেই মন খারাপ ব্যবসায়ীদের।
বিক্রেতারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল বন্ধ। তাই খুদে ক্রেতাদেরও দেখা নেই। স্কুল খোলা থাকলে বাচ্চারা নিশ্চয়ই কার্ড কিনতে আসত। সিউড়ি জেলা আদালত সংলগ্ন এক দোকানি বিকাশরঞ্জন সরকার বলছেন, ‘‘তিনদিন ধরে কার্ড সাজিয়ে রেখেছি। এখনও পর্যন্ত একজন ক্রেতা এসে কেবল তিনটি কার্ড নিয়ে গিয়েছেন।’’ আরেক দোকানি শিবতোষ দে বলেন, ‘‘বড়দিন থেকে কার্ড সাজিয়েছি। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন ক্রেতা এসেছেন। আসলে প্রত্যেক বছর কার্ড আনাই তাই এ বছরও আনিয়েছি। মনে হয় না যা কার্ড আনিয়েছি তা শেষ হবে।’’
চাহিদা না থাকায় কার্ড বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বীরভূম জেলা স্কুল সংলগ্ন বইয়ের দোকানি বিজু মাল। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছর ধরে কার্ড রাখা বন্ধ করে দিয়েছি। আসলে চাহিদা নেই, সব কার্ড বিক্রিও হয় না। এ বছর এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন এসে কার্ডের খোঁজ করে গিয়েছেন।’’