দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা

দিন কয়েক আগে সিউড়ির কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে একটি পুকুর খননকে কেন্দ্র সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তৃণমূলের দুই বিবাদমান গোষ্ঠী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:২৫
Share:

দিন কয়েক আগে সিউড়ির কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে একটি পুকুর খননকে কেন্দ্র সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তৃণমূলের দুই বিবাদমান গোষ্ঠী। দু’ পক্ষের বিবাদেই ছবিটা আরও স্পষ্ট করে এ বার দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করলেন তৃণমূলেরই তিন সদস্য। সঙ্গী বিরোধী বিজেপি ও কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী চার সদস্য। বুধবার দুপুরে সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিওর কাছে ওই প্রস্তাব জমা পড়েছে। বিডিও কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৫ আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েতের সাতজন সদস্যের সই সম্বলিত অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে। সই মিলিয়ে দেখে তলবি সভার দিন নির্দিষ্ট করব।’’

Advertisement

যদিও এটাই কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে প্রথম অনাস্থা আনা নয়।

গত ১৪ সালের ১৮ অগস্ট একইভাবে বিরোধীদলের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধান উজ্জ্বল সিংহের বিরুদ্ধে আনাস্থা এনেছিলেন প্রবীর ধর গোষ্ঠী। এ বারও প্রায় তেমনটই ঘটেছে। গত তলবি সভায় পঞ্চায়েত সদস্যরা অনুপস্থিত থাকায় অনাস্থা আনা যায়নি। কিন্তু এ বার সমীকরণ কী দাঁড়ায় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। তার পিছনে অন্যতম কারণ অতীত। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত ভোটের আগেই হোক বা প্রধান নির্বাচনপর্ব, সব সময়ই কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ১৫ আসনের মধ্যে তিনটি করে আসন পায় বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। একটি আসন পেয়েছিল নির্দল এবং বাকি ৫টি আসন পায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মনোনীত প্রার্থীরা। নির্দল থেকে জয়ী সদস্য অবশ্য ভোটের পরই তৃণমূলে যোগ দেয়। তৃণমূলের দুই পক্ষে সমীকরণটা দাঁড়ায় ৩-৩।

Advertisement

প্রধান নির্বাচনের আগে তৃণমূলের তরফে স্বর্ণময় সিংহের অনুগামী উজ্জ্বল সিংহের নাম প্রস্তাব করা হয়। যেটা মানতে পারেননি বিরোধী প্রবীর ধর(যিনি স্বপনকান্তি ঘোষের লোক বলে পরিচিত ছিলেন)। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে উজ্জ্বলবাবুর প্রধান হয়েছিলেন। সিপিএমের দুই সদস্য দলের নির্দেশ মেনে ভোট দানে বিরত ছিলেন। কিন্তু সেবার উজ্জ্বল সিংহকে ভোট দেওয়ায় রবীন্দ্রনাথ বাগদি নামে এক সিপিএম সদস্যকে বহিস্কার করে সিপিএম। এবারে আনা প্রস্তাবে সই করছেন সেই সব সদস্যরাই. তবে বিজেপির প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের বদলে একসময় উজ্জ্বলবাবুকে ভোট দেওয়া রবীন্দ্রনাথ বাগাদি রয়েছেন।

কেন অনাস্থা আনলেন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রবীরবাবুকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

মুখ খুলতে চাননি কাগজে কলমে বিরোধী সদস্যরাও। তবে সূত্রের খবর, এ বারও প্রধানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা, উন্নয়নে সফল না হওয়ার মতো কারণ দেখিয়েছেন অনাস্থা প্রস্তাবে সই করছেন প্রবীরবাবুরা। উজ্জ্বলবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রবীর ধর এর আগেও এনেছিলেন অনাস্থা। কিছুই করতে পারেননি। এবার পারবে না। কেন না প্রধান হিসাবে যা করার করেছি।’’

এলাকার রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, শাসকদলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় সই করছেন সাত জন। অন্যদিকে আট জন রয়েছেন। তাহলে এ বারও অনাস্থা পাস হবে না ধরে নিয়ে এগোলে কিছুটা ভুল হবে। কেন না, সমীকরন বদলেছে অনেকটাই। উজ্জ্বলের মাথা থেকে দলের হাত অনেকটাই সরছে। তার অন্যতম কারণ এ বার বিধানসভা নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছিল প্রধান উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে। প্রবীর ধর ঘনিষ্ট অঞ্চাল সভাপতি সত্যনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের আগেই ব্লক সভাপতি সহ জেলা নেতৃত্বের কানে বিষয়টি তুলে ছিলেন।

এবং, সিউড়ি ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলাম এবং রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার সাধুকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়। তাঁদেরই একজন বলছেন, বিষয়টির সত্যতা রয়েছে। ইস্তফা দিতে বলা হত। সেই সুযোগটাই হয়তো কাজে লাগালেন প্রাক্তন প্রধান প্রবীর ধর।

বিরোধী দলগুলির ভূমিকা কী হবে?

এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কালসোনা মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের তিন সদস্যের মধ্যে যে দু’জন সই করছেন তাঁদের একজন আগেই তৃণমূলে ঝুঁকেছেন। মালতি মণ্ডল নামে অন্যজন দলে থাকলেও দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। প্রথা মাফিক হুইপ দেওয়া হবে তলবি সভা থেকে সরে থাকতে। না শুনলে ভবিষ্যতে অন্য ভাবনা ভাবা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement