জয়চণ্ডী আর বেড়োয় এ বছর নেই প্রশিক্ষণ শিবির
Jaychandi Hill

পাহাড়ে চড়ায় বাধা করোনা

এ বারে বন্ধ প্রায় সব প্রশিক্ষণ শিবিরই। তাতে মন ভার শিক্ষার্থী থেকে প্রশিক্ষক, সকলেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪৯
Share:

ফাঁকা: জয়চণ্ডী পাহাড়ে প্রতি বছর এখানেই প্রশিক্ষণ শিবির থাকে বিভিন্ন পর্বতারোহণ সংস্থার। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

ফি বছরই শীতের মরসুমে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী থেকে বেড়ো পাহাড় সরগরম থাকে পাহাড় চড়ার শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের আনাগোনায়। তবে করোনা-আবহে বদলে গিয়েছে সেই চেনা ছবিটা। এ বারে বন্ধ প্রায় সব প্রশিক্ষণ শিবিরই। তাতে মন ভার শিক্ষার্থী থেকে প্রশিক্ষক, সকলেরই।

Advertisement

রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী ও বেড়ো পাহাড়ের গঠন, আকার পাহাড়ে চড়ার প্রাথমিক পাঠ শিখতে আর্দশ বলে মনে করেন প্রশিক্ষকেরা। তাই শীত পড়তে না পড়তেই কলকাতা থেকে শুরু করে আসানসোল, দুর্গাপুর এমনকি, পড়শি ঝাড়খণ্ড থেকেও শিক্ষার্থীদের এখানে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বিভিন্ন সংস্থাগুলি।

মূলত ২৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলে প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি। যদিও এ বার এখনও পর্যন্ত জয়চণ্ডী পাহাড়ে একটি মাত্র শিবির হয়েছে।

Advertisement

কেন এই অবস্থা? প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা জানান, যাতায়াতের সমস্যাই প্রধান। করোনায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় জয়চণ্ডী বা বেড়োতে আসতে পারেননি তাঁরা। কলকাতার একটি সংস্থা গত সাত-আট বছর ধরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসছে বেড়োর পাহাড়ে। সংস্থার কর্মকর্তা শ্যামল সরকার জানান, ফি বছর শিবিরে শতাধিক শিক্ষার্থী যোগ দেন। অনেক আগে থেকে ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু এ বার ট্রেনই বন্ধ থাকায় শিবিরের পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে।

তবে তাঁদের কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্য নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বেড়োয় গিয়ে পাহাড়ে চড়ার কলাকৌশল ঝালিয়ে এসেছেন বলে দাবি শ্যামলবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সংস্থা পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণের শিবির করে আসছে। এই প্রথম তা বন্ধ হল।’’

আসানসোলের একটি পাহাড় চড়ার সংগঠনের কর্মকর্তা কঙ্কন রায় জানান, ঝাড়খণ্ড, দুর্গাপুর, কলকাতা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জয়চণ্ডীতে প্রশিক্ষণ শিবির করেন তাঁরা। তবে করোনার কারণে এ বার তা বাতিল করতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘শিবিরে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে, ভীষণ সমস্যা হবে। তা ভেবেই আর শিবির করিনি।”

এ দিকে, কলকাতার একটি সংস্থা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর-কিশোরীদের পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ দেয়। বছর দু’য়েক ধরে সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের আনছে জয়চণ্ডী পাহাড়ে। সংস্থার কর্মকর্তা অনির্বাণ মজুমদার জানান, ছেলেমেয়ে ও তাদের অভিভাবকদের থাকার ব্যবস্থা হয় জয়চণ্ডী পাহাড়ের যুব আবাসে। তবে সেই আবাসকে করোনা-আক্রান্তদের ‘সেফ হাউস’ করা হয়েছে শোনার পরে, শিবির না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শিবির না হওয়ায় মন খারাপ শিক্ষার্থীদেরও। বিশেষ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যে সব ছেলেমেয়েরা জয়চণ্ডীতে শিবির করে গিয়েছেন, তারা মুখিয়ে ছিলেন ফের শিবিরে আসার জন্য। তেমনই কয়েকজনের অভিভাবক নমিতা পাণ্ডে, অর্পিতা চৌধুরীরা বলেন, ‘‘পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে, সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার শিবির হবে না জেনে ওদের মন খারাপ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement