বিষাক্ত ব্ল্যাক মাম্বা নেই তো কী হয়েছে! তার বদলে হলুদ-কালো ডোরা আঁকা ব্যান্ডেড ক্রেট বা রাজসাপ। আরও নানা কিসিমের সাপ, পাখি, চিতা আর হাতিদের ছবির ছড়াছড়ি পর্যটন প্রকল্পের ওয়েবসাইটে। দেখে তাজ্জব চাঁদের পাহাড়-এর ‘শঙ্কর’! একটু মজা করে বলেন, ‘‘এগুলো গুগ্ল থেক ডাউনলোড করা ছবি নয়তো! সত্যি অযোধ্যা পাহাড়?’
অযোধ্যা পাহাড়ে রাজ্যের নবীনতম পরিবেশবন্ধু পর্যটন প্রকল্পের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত শুনে মৃদু হাসলেন। শঙ্কর ওরফে দেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘ক’দিন বাদে নিজে গিয়েই সেটা সরেজমিন দেখতে পাবে!’’ পাহাড়-জঙ্গল-হ্রদ-বন্য জন্তুর সমাবেশে পুরুলিয়ার এই রোমাঞ্চকর জনপদটিতেই শঙ্করের চাঁদের পাহাড়-পরবর্তী অভিযান নিয়ে ছবির কিছু অংশের শ্যুটিং হবে। আমাজনের জঙ্গলে আউটডোরের পরে কিছু বাড়তি শট নিতে পুরুলিয়ার এই অরণ্যকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বাংলার এই ভয়ঙ্কর সুন্দরকে ঘিরে বাঘমু্ণ্ডি ব্লকের খৈরাবেড়ায় গড়ে উঠছে নয়া পর্যটন প্রকল্প।
রাজ্যের অন্য প্রান্তে জলদাপাড়ার কাছে চিলাপাতার গহন অরণ্যের রোমাঞ্চও পৌঁছে যাচ্ছে পর্যটকদের কাছে। আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে সংযোগের নতুন রাস্তা ঢেলে সাজছে। রাজ্য সরকারি উদ্যোগে পরিকাঠামোর উন্নতি পর্যটনের নানা দিক খুলছে। চিলাপাতার জঙ্গলেও নতুন প্রকল্পে হাত দিচ্ছেন উদ্যোগপতিরা। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের ঘোষণা, ‘‘পরিবেশবন্ধু পর্যটন-প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য উৎসাহ দিতে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করেছি। পর্যটন কারবারে উদ্যোগীদের জন্য ২০ কোটি টাকার উৎসাহ ভাতার বাজেট ধার্য হয়েছে।’’
গত কয়েক বছরে দেশ জুড়েই প্রকৃতির কোলে বিভিন্ন জনপদে স্থানীয় মানুষের গড়ে তোলা হোমস্টের সৌজন্যে পরিবেশবন্ধু পর্যটনের বিকাশ হয়েছে। সামাজিক বিকাশের এই পথটিকে কাজে লাগাতে রাজ্য সরকারও উদ্যোগী হয়েছে।
পর্যটনমন্ত্রীর দাবি, বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটনের বিকাশে তৎপর হতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত তাগাদা দিয়ে চলেছেন। কার্শিয়ংয়ের সিতংওয়ান, কালিম্পঙের লামাহাটা বা জলপাইগুড়ির মাগুরমারিতে এই ধরনের প্রকল্প গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার নিজেই উদ্যোগী হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রীর কথায়, ‘‘মাত্র ২০ শতাংশ রাজস্বের ভাগের বিনিময়ে বেসরকারি অংশীদারদের আমরা পর্যটন প্রকল্পে উৎসাহ দিচ্ছি।’’
তবে কোনও একটা সুন্দর জায়গায় পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা হলেই তা পরিবেশবন্ধু পর্যটন প্রকল্প বলা যায় না। রাজ্যের পর্যটন-কর্তাদের দাবি, ‘‘এটা মাথায় রেখেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘গ্রিন জোন’ গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বা যত্রতত্র নোংরা ফেলার প্রবণতা নিয়েও সচেতনতা-অভিযান চলছে। আবার স্থানীয় মানুষের সাহায্যে জৈবচাষের অর্গানিক কিচেনও গড়ে উঠছে।’’ খৈরাবেড়ার ইকো-অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন কেন্দ্রের কর্ণধার অরিজিৎবাবুও বলছেন, ‘‘অযোধ্যা পাহাড়ের পাথুরে এলাকায় জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশে ৩৪ রকমের গাছগাছালি সাজানো হয়েছে। রাতে হাতি-চিতা ঘুরে দেখার সুযোগ থাকবে।’’ পুরুলিয়ার খৈরাবেড়ার পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন হবে মাস খানেকের মধ্যে। তার আগে এ দিন তার ওয়েবসাইটটির (wwwecoadventureresorts.net) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল।