শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা। — আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
তিন বছর পর আবার পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শান্তিনিকেতনবাসীর মধ্যে খুশির হাওয়া। কিন্তু, ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নতুন করে জটিলতা তৈরি হল। এ বার শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের তরফে জানানো হল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতো ছোট করে মেলা করা সম্ভব নয়। ফলে মেলা আদৌ পূর্বপল্লির মাঠেই করা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্রবার প্রায় দু’ঘণ্টা কর্মসমিতির বৈঠকের পর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানান, সেই পরিচিত মাঠেই এ বার পৌষমেলার আয়োজন করা হবে। তবে পরিবেশ আদালতের বেশ কিছু দূষণবিধি আছে। সেই বিধি মেনে ছোট করে মেলার আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ, আগের মতো এত জাঁকজমক থাকবে না। কিন্তু শনিবার শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার জানিয়ে দেন, ছোট করে মেলা করা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘মেলার যে ব্যয় হয়, সেই খরচপাতি এই দোকানপাট থেকে উঠে আসে। তা ছাড়া, বিশ্বভারতীর তরফ থেকে মেলা করার কথা জানানো হলেও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টকে এখনও পর্যন্ত কোনও কিছু জানানো হয়নি।’’ তাঁর আরও যুক্তি, মেলায় যদি কেউ দোকানপাট নিয়ে আসেন, ছোট করে ব্যবসা করতে চান, তা হলে ওই ব্যবসায়ীদের বারণ করা সম্ভব হবে না। ফলে মেলা আগের মতোই করতে হবে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সংযোজন, তারা মেলা করতে অনিচ্ছুক নয়। বরং উল্টোটাই। কিন্তু মেলা আগের মতোই বড় আকারে হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর পৌষমেলা আয়োজন করে বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। মেলার তত্ত্বাবধানে থাকেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই পৌষমেলা করতে হলে দু’পক্ষের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা বাঞ্ছনীয় এবং প্রয়োজনীয়। সেখানে দাঁড়িয়েই দুই বিপরীত মত এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে জটিলতা শুরু হল। বস্তুত, আজ শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের এমন দাবিতে শোরগোল শুরু হয়েছে ব্যবসায়ী মহলেও। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই ভাবে আদৌ পৌষমেলা সম্ভব কি না। আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, পৌষমেলা ছোট করে হলেও পূর্বপল্লির মেলার মাঠেই যে হচ্ছে, এটাই তাঁদের কাছে বড় বিষয়।
২০১৯ সালে শেষ বার পূর্বপল্লির মাঠে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী ওই মেলা হয়েছিল। তার পর ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় মেলা। তবে তার পর থেকেই তৎকালীন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত তুঙ্গে ওঠে।। ২০২১ এবং ’২২ সালেও পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা বন্ধ করে দেন বিদ্যুৎ। নভেম্বরেই বিদ্যুতের উপাচার্য পদে মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর বিদায়ের পর আবার পুরনো জায়গায় ফিরেছে পৌষমেলাও।