Bhai Fota

বোনেদের নজর টানতে মিষ্টিতে ফিউশন-ম্যাজিক

পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা স্নিগ্ধা সরকার বলেন, ‘‘নতুন কিছু মিষ্টি কিনেছি। সঙ্গে নিখুঁতিও রয়েছে। কারণ এটাই পুরুলিয়ার নিজস্ব ব্র্যান্ড।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

পুরুলিয়া শহরের একটি দোকানে তৈরি হচ্ছে নানা রকমের মিষ্টি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ, সুজিত মাহাতো।

ফোঁটা দেওয়ার পরে দাদা-ভাইয়ের প্লেটে মনের মতো মিষ্টি সাজিয়ে দেবেন বোন-দিদিরা। তবে, মিষ্টির প্রভাব যাতে স্বাস্থ্যে না পড়ে, সে দিকেও নজর রয়েছে বোন-দিদিদের। তাই মিষ্টি চয়নে বেশ সতর্ক তাঁরা। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় ভাইফোঁটার মিষ্টির বাজার বলছে, এ বার সুগার ফ্রি মিষ্টি বিকোচ্ছে বেশি। সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে অন্য মিষ্টিও। বিভিন্ন স্বাদের মিশ্রণ বা ফিউশন ঘটিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা নতুন মিষ্টিও।

Advertisement

বোন-দিদিদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে পুরুলিয়া শহরের পিএন ঘোষ স্ট্রিটের একটি মিষ্টির বিপণিতে বেশ কিছু নতুন ধরনের মিষ্টির দেখা মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে কফি সন্দেশ, পানপাক, ব্ল্যাকবেরি সন্দেশ, খেজুর লাড্ডু আর বাটার স্কচ ছানার পায়েস। বিপণির মালিক সজ্জন রাজগড়িয়ার কথায়, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখছি, খুব হালকা মিষ্টির চাহিদা বাড়ছে। সে কথা মাথায় রেখে ভাইফোঁটা উপলক্ষে আমরা প্রতিবারই বেশ কয়েকটি মিষ্টি নিয়ে হাজির হই। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সময় স্পেশাল গুলাবজামও বানানো হয়। পাশাপাশি, রসগোল্লা বা গঁদলাড্ডু, ঘিয়ের লাড্ডু, ক্রাউন সন্দেশ, দিলখুশ, কেশর জিলিপি কিংবা কচুরি তো আছেই।’’

পুরুলিয়া শহরের ভবতারণ সরকার রোডের একটি বিপণি এ বার হাজির হয়েছে দুই রঙের ‘টু ইন ওয়ান’ ক্যাডবেরি-এলাচ রসগোল্লা, বম্বে রোল, জলভরার মতো সন্দেশ নিয়ে। দোকানদার প্রকাশ বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন ধরনের সন্দেশ, ভাপা সন্দেশ, ছানার গজা, সীতাভোগ, মিহিদানা, রাজভোগ ও কেশরভোগের মতো মিষ্টির চাহিদাও রয়েছে। পুরুলিয়ার নিখুঁতির চাহিদা ও কদর আজও অটুট। শহরের কোর্ট মোড়ের মিষ্টির দোকানের মালিক নন্দদুলাল লাই জানান, সাধারণত দিনে কমপক্ষে ৫০ কেজি নিখুঁতি বিক্রি হয়। ভাইফোঁটা উপলক্ষে এক কুইন্টালের বেশি নিখুঁতি তৈরি করেছিলাম। বুধবার বিকেলের আগেই সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা স্নিগ্ধা সরকার বলেন, ‘‘নতুন কিছু মিষ্টি কিনেছি। সঙ্গে নিখুঁতিও রয়েছে। কারণ এটাই পুরুলিয়ার নিজস্ব ব্র্যান্ড।’’

বাঁকুড়ার রামপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী মলয় বরাট বলেন, ‘‘শুধু বয়স্করাই নন, আধুনিক প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরও অনেকে এখন স্বাস্থ্য সচেতন। সুগার ফ্রি মিষ্টির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। এ বার ভাইফোঁটায় সুগার ফ্রি মিষ্টির চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। পাশাপাশি, মনোরঞ্জন, চিত্তরঞ্জন, পুডিন সন্দেশ, কাজু বরফিকে নতুন ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। চিরাচরিত মিষ্টিও হাজির করানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে।

বাঁকুড়া শহরের ভৈরবস্থানের মিষ্টি ব্যবসায়ী গিরিধারী বরাট বলেন, “মিষ্টিতে উৎসবের প্রতিচ্ছবি থাকলে মানুষের নজর কাড়ে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এ বার মিষ্টি বানিয়েছি আমরা।”

কেমন সেই মিষ্টি?

গিরিধারী বলেন, ‘‘বোন ফোঁটা দিচ্ছে ভাইকে— এমন ছাঁচে গড়া হয়েছে সন্দেশ। দীপাবলির মরসুমকে তুলে ধরতে প্রদীপ আকৃতির সন্দেশ বানানো হয়েছে। তার বাইরেও সরভাজা বরফি, কমলাভোগ, গোলাপজামের মতো মিষ্টিও রয়েছে।’’ বিষ্ণুপুর স্টেশন রোডের ব্যবসায়ী জগন্নাথ লাহা জানান, ভাইফোঁটা উপলক্ষে বেশ কিছু নতুন মিষ্টি এ বার তৈরি হয়েছে। যেমন ডোডা বরফি, জলভরা, মুগলাড্ডু, চকলেট রসগোল্লা। জগন্নাথ বলেন, “কালীপুজো থেকেই মিষ্টির চাহিদা বেড়েছে। সে কারণে নতুন ধরনের মিষ্টি বাজারে এনেছি। ভালই বিক্রি হচ্ছে।”

এ দিন থেকেই বাঁকুড়ার মিষ্টির দোকানগুলিতে ভিড় চোখে পড়েছে। দাদাকে ফোঁটা দিতে কলকাতা থেকে বাঁকুড়ায় এসেছেন শ্যামলী চট্টরাজ। ভৈরবস্থানে মিষ্টি কেনার ফাঁকে তিনি বলেন, “নানা ধরনের মিষ্টি কিনেছি। মূল্যবৃদ্ধির জেরে জেরবার হতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু ভাইফোঁটা তো বছরে একবারই আসে। তাই মিষ্টি কেনায় খামতি রাখিনি। তবে দশ টাকার নীচে কোনও ভাল মিষ্টি বাজারে নেই।” বিষ্ণুপুরে স্টেশন রোডের একটি দোকান থেকে মিষ্টি কিনে ঝুমা ভট্টাচার্য বলেন, “দাদার বাড়ি সিমলাপালে। সেখানেই ভাইফোঁটা দেব। বিষ্ণুপুরে নানা ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। তাই এখান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”

ভাইদেরে পাতে তাই এ বারও মিষ্টির বৈচিত্র্যের অভাব হচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement