নতুন আর্ট গ্যালারিতে টেরাকোটার ভাস্কর্যের প্রদর্শনী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বিস্তীর্ণ খোয়াইয়ের মধ্যে একলা দাঁড়িয়ে থাকা একটি তালগাছের মধ্যেই তাঁকে খুঁজে নিতে ছাত্র সত্যজিৎ রায়কে বলেছিলেন শিক্ষক বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। সংস্কারের পরে বুধবার নতুন ভাবে প্রদর্শনী শুরু হওয়া কলাভবনের নন্দনের দু’টি আর্ট গ্যালারির নামকরণ করা হল তাঁরই নামেই। যেখানে আগামীতে তাঁর কাজ নিয়ে স্থায়ী প্রদর্শনী করার ভাবনা রয়েছে কলাভবন কর্তৃপক্ষের।
“খোয়াই বাদ দিও না। খোয়াই আর তাতে একটা সলিটারি তালগাছ। ব্যস। আমার স্পিরিট, আমার জীবনের মূল ব্যাপারটা যদি কোথাও পেতে হয়, ওতেই পাবে। বলতে পার, ওটাই আমি।” বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে করা তথ্যচিত্র ‘ইনার আই’ তৈরির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এমনটাই লিখেছিলেন সত্যজিৎ, তাঁর ‘বিনোদদা’ প্রবন্ধে। এ দিন বিনোদবিহারীর নামাঙ্কিত সেই গ্যালারির উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন এ দিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয়কুমার সরেন, কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা, শিক্ষক ও শিল্প ইতিহাসবিদ অশোককুমার দাস, অন্য শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও কলাভবনের প্রাক্তনীরা।
কলাভবন সূত্রে খবর, বিভিন্ন শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর জন্য প্রায় ২০ বছর আগে কলাভবনের তত্ত্বাবধানে ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নন্দন আর্ট গ্যালারির দ্বিতলে তৈরি হয়েছিল দু’টি আর্ট গ্যালারি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোলার কিছু দিন পরে গ্যালারি দু’টি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে গ্যালারির বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায় বলে কলাভবন সূত্রের খবর। চলতি বছরেই গ্যালারি দু’টিকে ফের প্রদর্শনীর উপযুক্ত করে খোলার চিন্তাভাবনা শুরু করে কলাভবন।
পরিকল্পনা মাফিক গ্যালারি দু’টির সংস্কার করা হয়। অবশেষে এ দিন গ্যালারি দু’টি খোলা হয়। সেখানে এ বার টেরাকোটার বিভিন্ন ভাস্কর্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলাভবন সূত্রে খবর, দু’টি গ্যালারিতে নন্দলাল বসুর সময় থেকে কলাভবনের সংগ্রহ করা টেরাকোটার ভাস্কর্য, রিলিফ মিলিয়ে ১০০টির বেশি কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। দেশি ও বিদেশি শিল্পীদের কাজ এর মধ্যে রয়েছে। এ ধরনের কাজ দেখে শিল্পী, গবেষক, পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন বলে কলাভবনের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।
কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা বলেন, “বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে মৃণালিনী মুখোপাধ্যায়ের খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর বাবার কাজগুলি কলাভবনকে দান করার। সেগুলিকে কলাভবন যাতে সংগ্রহ করে রাখে এবং সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরে এ কথা বলেছিলেন মৃণালিনী। তাই আমরা এই গ্যালারি দু’টির নামকরণ করেছি বিনোদবিহারীর নামানুসারে। দু’টি গ্যালারির মধ্যে একটি গ্যালারিতে বিনোদবিহারীর কাজ স্থায়ী ভাবে প্রদর্শনের ভাবনা রয়েছে। অন্যটিতে আমাদের সংগ্রহের কাজকর্মকে বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শন করা হবে।”