মহকুমা শাসকের নির্দেশে কাউন্সিলর পদ খারিজ হয়ে গেল পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের। — ফাইল ছবি।
জট কাটার মুখে আবারও নতুন করে তা পাকিয়ে গেল ঝালদায়। এ বার কাউন্সিলর পদই খারিজ হয়ে গেল সদ্য শপথ নেওয়া পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের। স্বভাবতই পুরপ্রধান পদ হারাচ্ছেন তিনি। বুধবার ঝালদার মহকুমাশাসক এই সংক্রান্ত এক নির্দেশনামা জারি করেছেন। বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ্যে আসতেই নতুন করে তোলপাড় পুরুলিয়া। নতুন করে অচলাবস্থা ঝালদা পুরসভায়। আপাতত তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ কর্মকার পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন।
ঝালদা পুরসভার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি চুম্বকে, ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ!’ দীর্ঘ টানাপড়েনের পর মঙ্গলবার ঝালদার পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শীলা। কিন্তু পুরপ্রধান পদে ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ জারি করল প্রশাসন। যে চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার। তাতে মহকুমাশাসক শীলার কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে পুরপ্রধান পদেও আর থাকতে পারবেন না শীলা।
প্রসঙ্গত, শীলা নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে জেতেন। তার পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি কংগ্রেসে কাউন্সিলরদের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন। ফলে শীলা কোন দলে আছেন, তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়। প্রশাসনের কাছে দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজ করার দাবি জানায় তৃণমূল। বুধবার প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিল, কাউন্সিলর পদে থাকতে পারবেন না শীলা। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী রণকৌশল স্থির করতে জরুরি বৈঠকে বসেছে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, এটাই হওয়ার ছিল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট পুর আইন মেনে শীলার কাউন্সিলর পদ খারিজের দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলাম। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রমাণও জমা দিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে। তার ভিত্তিতেই ওঁর সদস্যপদ খারিজ হয়েছে।’’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে যোগাযোগ করা হলে শীলা ফোন ধরেননি। ফোন ধরেননি পুরুলিয়ার কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতোও। ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ কর্মকারের উপর ঝালদা পুরসভার পুরপ্রধানের দায়ভার সামলনোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে ঝালদা পুরসভার লড়াই আবার আদালতের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ ঝালদা শহরে সান্ধ্যভ্রমণ করতে বেরিয়ে খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। প্রথম দিকে খুনের ঘটনায় জেলা পুলিশ সিট গঠন করে তদন্ত করছিল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। ঝালদায় আবার ভোট হয়। গত বছর ডিসেম্বরেও কংগ্রেস পুরবোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু, তার আগে আচমকাই পুরসভায় চেয়ারপার্সন নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, রাজ্যের পুর আইনের ১৭ (৪) ধারা অনুযায়ী এই নিযুক্তি। এ নিয়ে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।