নতুন শুরু। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রতীক্ষা শেষ হল রাজনগরের কাঁটাশোলা ও সংলগ্ন গ্রামের মানুষের। দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে ভেঙে পড়া কজওয়েটির বদলে তৈরি হল নতুন সেতু। সম্প্রতি জেলা পরিষদ ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের টাকায় তৈরি হয়েছে রামডাঙা, কাঁটাশোলা, ধানকুলি কাঁদরের সেতু। খরচ হয়েছে, সাড়ে বিয়াল্লিশ লক্ষ টাকা।
যোগাযোগের দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। অন্য দিকে সেতুটির সঙ্গে এলাকার একটা মর্মান্তিক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে নিম্নচাপের বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে কজওয়ের হিউম পাইপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল রাজনগরের কাঁটাশোলা গ্রামের তিন বাসিন্দা। মাথায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল কাঁটাশোলা কজওয়েটি। কেউ বাঁচেননি সে দিন। বছর ছয়েক আগের সেই দিনের কথা এখনও ভুলতে পারেননি গ্রামবাসীরা।
এলাকার বাসিন্দারা ভেঙে পড়া সেতুটি আবার নতুন করে তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বহু বছর কেটে গেলেও, প্রশাসন তেমন গুরুত্ব দেয়নি। জেলাপরিষদ ও রাজনগরের পঞ্চায়েত দুটি জায়গায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর উদ্যোগ নেয়। এলাকাবাসীদের দাবি মেনে, রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার সাধু বিষয়টি জেলাপরিষদের সভধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরীর নজরে নিয়ে আসেন। এরপরই সেতুটি তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। কজওয়েটি হওয়ায় শুধু রাজনগরের বেশ কিছু গ্রামের মানুষই শুধু উপকৃত হবেন তাই নয়, উপকৃত হবেন লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও। সর্বপরি সিউড়ি থাকে মশানজোড় যাওয়ার রাস্তার দূরত্ব একধাক্কায় কমে গেল অন্তত ২০ কিমি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা কাঁটাশোলা গ্রামের কিছুটা দুরেই রয়েছে কাঁদরটি। তাই কাঁটাশোলা কাঁদর নামেই পরিচিত সেটি। কিছুদুর গিয়ে কাঁদরটি কুশকর্ণিকা নদীতে মিশছে। সাধারণত বর্ষাকালের ৪-৫ মাস বাদে তেমন জল থাকে না কাঁদরে। এতে কিছুটা মোরাম ছড়িয়ে রাস্তা করে দিব্যি চলাচল করা হত। কিন্তু বর্ষার মাসগুলিতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় গৌরাঙ্গ ঘোষ, সপ্তম দলুই, নির্মল কুমার সাধু, সুজয় মণ্ডল বা পরেশ পালেরা জানালেন, কাঁদরের এপারে থাকা কাঁটাশোলা, গনেশপুর, ভবানীপুর, বেলেড়া, নতুনগ্রাম বা রামডাঙা, হরিপুর এবং ঝাড়খণ্ডের বাংলা, কুমকুমা, আমজোড়ার মতো বহুগ্রামের মানুষ ওই রাস্তায় যাতায়াত করেন। সেটা জমির ফসল দেখভাল করতেই হোক বা ফসল ঘরে তুলতে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ‘‘বছর কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডে আমজোড়ার কাছে মযূরাক্ষী নদীর উপর সেতু হয়ে যাওয়ায় রাজনগরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রটি উন্নত হয়েছিল। অসুবিধা ছিল কজওয়েটিকে ঘিরেই। এখন সেটা নতুন করে তৈরি হওয়ায় সমস্যা মিটল।’’