বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবদারপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের নতুন অফিস। নিজস্ব চিত্র।
মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। বীরভূম জেলা প্রশাসন চায়, আলোচনার ভিত্তিতে প্যাকেজ নিয়ে সহমতে পৌঁছন এলাকার মানুষ। তার পরেই কাজ শুরু হবে। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসছেন প্রস্তাবিত খনি এলাকায় বসবাসকারী কয়েকটি গ্রামের আদিবাসীরা। আদিবাসী সমাজের মোড়লদের ডাকে ওই আলোচনা সভা বসবে হরিণশিঙা মাঠে। তার জন্য বুধবার সকালে নাগাড়া পিটিয়ে বাসিন্দাদের খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোড়লেরা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার প্রস্তাবিত খনি এলাকার বসবাসকারী বিভিন্ন অংশের মানুষ, ক্লাব সদস্য, আদিবাসী সংগঠনের নেতা, আদিবাসী সমাজের মাথা, এলাকার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য-সহ মোট ১৬৫ জনকে সিউড়ির রবীন্দ্র সদনে ডেকে তাঁদের হাতে সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন প্যাকেজের প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফে।
প্রশাসন জানিয়েছে, মোট প্রস্তাবিত ৩৪০০ একর জমিতে একলপ্তে নয়, দু’টি কোল ব্লকের মধ্যে প্রথম ধাপে খনির কাজ শুরু হবে দেওয়ানগঞ্জ হরিণশিঙা কোল ব্লকের। ওই ব্লকে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা ও নিশ্চিন্তপুর মৌজার গ্রামগুলি। সেগুলি মধ্যে একমাত্র চাঁদপুর ছাড়া প্রায় প্রতিটিতে আদিবাসীদের সংখ্যাধিক্য। আজকের বৈঠকে সেই আধিবাসীদের সকলের আসার কথা।
তবে, প্যাকেজ নিয়ে এলাকায় কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। বুধবার সকালে স্থানীয় হিংলো পঞ্চায়েতের সৌজন্যে কিছু বাড়িতে প্যাকেজ নিয়ে প্রচার চলেছে। তবে সেটা মোটেও যথেষ্ট নয় বলেই মত এলাকাবাসীর। আদিবাসী সমাজের মাথারা বলছেন, ‘‘মাত্র একটা বৈঠকে আদিবাসী মনের সবটা বোঝা সম্ভব নয়। তবে খনি নিয়ে তাঁদের ভাবনার একটা একটা প্রাথমিক আঁচ অন্তত পাওয়া যাবে বলে আমাদের আশা।’’
এর পাশাপাশি খনি এলাকার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবদারপুর গেস্ট হাউসে বড় অফিস খুলেছে খনি গড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। ইংরেজি বাংলা ও সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফে লেখা বোর্ড ঝুলছে সেখানে। এক জন স্পেশ্যাল অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, প্রস্তাবিত খনি এলাকার মানুষ কোনও জিজ্ঞাসা নিয়ে এলে তার সদুত্তর দেওয়া। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মঙ্গলবারই খনি নিয়ে বৈঠক করেছেন নিগমের এমডি পি বি সেলিম। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘খনির কাজ কী ভাবে এগিয়ে নিতে হবে, সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।’’
এ ছাড়া, খনি এলাকার হিংলো, ভাঁড়কাটা, পুরাতনগ্রাম, সেকেড্ডা ও ডেউচা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি মৌজায় বসবাসকারীদের জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য চার দিনের শিবিরও শুরু হচ্ছে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) শুভ্রজ্যোতি ঘোষ জানান, গত বছর অনুরূপ শিবির করে জমির রেকর্ড ঠিক করা হয়েছে। এ বারও হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে যদিও জানা যাচ্ছে, জমির রেকর্ড সংক্রান্ত অনেক সমস্যা রয়েছে এখনও।