বিরোধী-নিশানায় পুরসভা

এলইডি ‘দুর্নীতি’

বাজার থেকে কিনলে পড়ছে ৬,০০০ ট়াকা। অনলাইনে প্রতিটির দাম ৪,৭২৫ টাকা। সেই জিনিসই প্রতিটি কিনে বসাতে পুরসভা খরচ করেছে ৯,৯০০ টাকা!রামপুরহাটে সে খবর জানাজানি হতেই শহরের রাস্তায় এলইএডি পথবাতি বসানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিরোধীরা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:০৬
Share:

বাজার থেকে কিনলে পড়ছে ৬,০০০ ট়াকা। অনলাইনে প্রতিটির দাম ৪,৭২৫ টাকা। সেই জিনিসই প্রতিটি কিনে বসাতে পুরসভা খরচ করেছে ৯,৯০০ টাকা!

Advertisement

রামপুরহাটে সে খবর জানাজানি হতেই শহরের রাস্তায় এলইএডি পথবাতি বসানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিরোধীরা। শুধু তা-ই নয়, যে ঠিকাদার ওই এলইডি পথবাতি জোগান দিয়েছেন, প্রশ্ন উঠেছে তাঁকে নিয়েও। কারণ, ঠিকাদার আসলে পুরসভারই শাসকদলের এক কাউন্সিলরের স্বামী। বিরোধীদের দাবি, কাউন্সিলরের আত্মীয় পুরসভার কোনও কাজে ঠিকাদার হতে পারেন না। রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গোটা প্রক্রিয়ায় কোথাও কোনও বেনিয়ম হয়নি বলে পুরপ্রধানের দাবি।

ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে শহরে একসময় বসেছিল ত্রিফলা পথবাতি। সেই সময় শহরে অন্য অনেক এলাকা অন্ধকার হয়ে পড়ে থাকলেও জায়গায় জায়গায় পুরনো সোডিয়াম ভ্যাপার লাইটের নীচেই পুরসভা ত্রিফলাগুলি বসানো হয়েছিল। বছর ঘুরতেই সেই ত্রিফলাগুলির একটা অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ বিলও প্রায় আড়াই কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সালে পুরভোটের আগে হঠাৎ-ই ত্রিফলাগুলি সরিয়ে গাঁধী পার্কে বসোনো হয়। পরে শহরজুড়ে ৬০ ওয়াটের সিএফএল বাতি বসানো হয়। বছর ঘুরতেই গত ডিসেম্বরে সিএফএল লাইটের সঙ্গেই এলইডি পথবাতি বসানো হয়। আর সেই আলো নিয়েই ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে শুরু করেছে সিপিএম। শহরে পড়েছে পোস্টারও।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, একটি বহুজাতিক এলএইডি আলো প্রস্তুতকারী সংস্থার ৫০ ওয়াটের মোট ১৯০টি পথবাতি বসানো হয়েছে শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। গত ডিসেম্বরে এই মর্মে পুরসভা টেন্ডার ডেকেছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তিনটি সংস্থা কাজের বরাত পাওয়ার জন্য টেন্ডার জমা করেছিল। বরাত পায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মীণাক্ষী ভকতের স্বামী সোমেন ভকতের সংস্থা ‘হিন্দুস্তান এজেন্সি’। পুরসভায় জমা পড়া বিল অনুয়ায়ী, প্রতিটি পথবাতি কেনা ও লাগানো বাবদ তারা ৯,৯০০ টাকা করে খরচ করেছে।

সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের দাবি, ‘‘বাজারে ওই এলইডি আলোর দাম ৬ হাজার টাকা। অনলাইনে আরও কম। তা বসাতে বড়জোর আরও ৭০০ টাকা খরচ হতে পারে। অথচ ওই সংস্থা প্রতিটির পিছনে ৯,৯০০ টাকা বিল দেখিয়েছে। অর্থাৎ ৩,২০০ টাকা করে কাটমানি খেয়েছে ওই ঠিকাদার সংস্থা।’’ প্রকল্পে দুর্নীতির দাবি করেছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর অমল শেখ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরীও। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুরসভা এক জন কাউন্সিলরের স্বামীকে ওই কাজের বরাত পাইয়ে দিয়েছে।’’ একই বক্তব্য শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিরও। বিরোধীদের দাবি, জনগণের করের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে এ ভাবেই নয়ছয় করছে তৃণমূল পরিচালিত এই পুরসভা।

এ দিকে, সোমেনবাবুর দাবি, ‘‘ওঁরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। ১৯০টি এলইডি পথবাতির ক্ষেত্রে কেনার দাম, বসানোর সরঞ্জাম বাবদ খরচ ও মিস্ত্রি খরচ মিলিয়ে প্রতিটির জন্য আমার ৯,৯০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। সেই বিলই পুরসভায় জমা দিয়েছি।’’ কাউন্সিলরের স্বামী হলেও কাজের বরাত পেতে তিনি কোনও প্রভাব খাটাননি বলেও দাবি করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান দাবি করেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনেই ওই সংস্থাকে এলইডি বসানোর বরাদ দেওয়া হয়েছে। কোথাও দুর্নীতি হয়নি। ব্যবসায়ী হিসাবে যে কেউ ঠিকাদার হতে পারেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement