কসরত: মহরমের মিছিলে। শুক্রবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র
প্রাচীন ইমামবাড়া সংলগ্ন মেলা প্রাঙ্গণে সরিবদ্ধ ভাবে রাখা সুসজ্জিত তাজিয়া, রংবেরঙের নিশান। চার দিকে বেজে চলছে বাজনা। কারবালার স্মরণে সম্মিলিত ‘হায় হাসান, হায় হোসেন’ ধ্বনি। মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন অংশে লাঠি, তলোয়ার খেলায় ব্যস্ত তরুণ-যুবকের দল। হাজার হাজার সুবেশ পুরুষ, মহিলা ও শিশু।
ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম, মহরম মাসের ১০ তারিখ বীরভূমের রাজনগরে এটাই ছবি।
মহরমের দিন অস্ত্র মিছিল নয়। ধর্ম নিয়ে অসহিষ্ণুতার মধ্যে গত বছরেই নজির গড়েছিল বীরভূমের সিউড়ি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে শহরের মহরম কমিটিগুলি মিলিত ভাবে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যা এ বার গোটা জেলায় সঞ্চারিত। শনিবার মহরমের মিছিলে সেই একই ধারা বজায় রাখতে চলেছে শহরের মহরম কমিটিগুলি।
সিউড়ির বর্তমান কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি কাজী ফরজুদ্দিন বলছেন, ‘‘মহরমের মিছিলের জন্য শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাতে অসুবিধা না হয়, তাই মিলিত ভাবে ঠিক হয়েছে শুক্রবারের পরিবর্তে শনিবার মহরমের মিছিল বের হবে। গত বারের মতো এ বারও কোনও অস্ত্র থাকবে না।’’
জানা গিয়েছে, শহরে অস্ত্র ছাড়া মহরমের মিছিল করার বীজবপন করেছিল দু’বছর আগে। তা শুরু করেছিল সিউড়ির কাটাবুনি যুবকল্যাণ মহরম কমিটি। শোভাযাত্রায় শুধুমাত্র শোক বা মাতম পালনেই মহরম সীমাবদ্ধ রেখে গোটা শহর ঘুরেছিলেন কমিটির সদস্যরা। সেই ধারা সকলেই পালন করুন— আগের বার দুর্গাপুজো ও মহরমের আগে সমন্বয় কমিটি গড়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এমনই আবেদন জানিয়েছিল প্রশাসন। সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয় এমন কিছু না করে সুষ্ঠু ভাবে সব করার আবেদন রাখা হয়েছিল মহরম কমিটিগুলির কাছে। অস্ত্র ছাড়া মিছিল করে তাতে সদর্থক সাড়া দেয় কমিটিগুলি। এ বারও সেই ধারা অক্ষুণ্ণ থাকবে, এক বাক্যে বলছেন মহরম কমিটির উদ্যোক্তারা। কেমন ভাবে পালিত হয় মহরমা, আজ তারই অপেক্ষায় থাকবেন শহরবাসী।
রাজনগরে মুসলিম রাজাদের শাসনকালে নির্মিত ইমামবাড়ার সামনে শুক্রবার যেন রঙের সমারোহ, মানুষের ঢল। শুধু মুসলিম নন, রাজনগরের ঐতিহ্যশালী মহরেমের মেলায় অন্য বারের মতো এ বারেও সমান ভাবে সামিল হিন্দুরাও। বর্তমানে মহরম উপলক্ষে মেলার পরিচালনার দায়িত্বে ‘রাহে ইসলাম সমাজ কল্যাণ সোসাইটি’। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের সহযোগিতায় থাকে শান্তি কমিটি এবং রাজনগর ব্লক ও পুলিশ প্রশাসন। দু’টি কমিটির সভাপতি মুসলিম রাজাদের উত্তরপুরুষ রাজা রফিকুল আলম খাঁ সাহেব। তাঁর হাত ধরেই মেলার সূচনা হল শুক্রবার সকালে।
রাহে ইসলাম কমিটি তথা রাজপরিবারের সদস্য সফিউল আলম ও শান্তি কমিটির সহ সম্পাদক প্রদীপ দে জানান, রাজনগরের সব চেয়ে বড় উৎসবের মধ্যে পড়ে মহরম মেলাও। মেলার স্থায়িত্ব মাত্র এক বেলা। কিন্তু প্রচুর লোকসমাগম হওয়ায় অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ দিন সকাল ৮টা থেকে তাজিয়া নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা করে একে একে আসতে শুরু করে রাহে ইসলাম, আড়ালি, সাকির পাড়া, খোদাইবাগ, দামপাড়া, রঞ্জু পাড়া, গুলালগাছির তাজিয়া। ঘন্টাখানেকের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে থিকথিকে ভিড়। পসরা নিয়ে উপস্থিত দোকানিরা।