হাতেনাতে: সাংসদের জরিমানার চালান লেখা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ হেলমেট পরেই মোটরবাইক চালাতে হবে। অথচ রবিবার শাসকদলের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিনা হেলমেটেই মোটরবাইক নিয়ে বাঁকুড়ার পথে নামলেন। ধরাও পড়লেন পুলিশের হাতে! পুলিশ জরিমানা করলেও এ দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় টাকা জমা করতে পারেননি তিনি। গাড়ির ‘ব্লু বুক’ পুলিশের কাছে জমা রেখেই ছাড় পেলেন তিনি।
কেন হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন? যুব তৃণমূলের রাজ্য নেতা সৌমিত্রবাবু বলেন, “মোটরবাইক চালানোর অভ্যেস কমে গিয়েছে। বাজারে মাছ কিনতে বেরিয়ে ছিলাম। এক বন্ধুর মোটরবাইক দেখে সেটা চালাতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু তখন হেলমেট মাথায় দেওয়ার কথা খেয়াল ছিল না।’’ বাঁকুড়ার সার্কিটহাউস মোড় সংলগ্ন একটি আবাসনে থাকেন সৌমিত্রবাবু। সেখান থেকেই বন্ধুর মোটরবাইক নিয়ে তিনি ভৈরবস্থান মোড় পার হচ্ছিলেন। সেই সময় ভৈরবস্থান মোড়ে বিনা হেলমেটের মোটরবাইক চালকদের ধরপাকড় করছিল পুলিশ। নেতৃত্বে ছিলেন বাঁকুড়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
সৌমিত্রবাবুকে প্রথমে চিনতে না পেরে সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে আটকান। তবে সব্যসাচীবাবু তাঁকে চিনতে পারেন। ততক্ষণে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে সাংসদ নিজেই পুলিশের কাছে জরিমানা দিতে যান। এমনকী এক বন্ধুকে ফোন করে বাড়ি থেকে হেলমেট নিয়ে আসতে বলেন। সৌমিত্রবাবু বলেন, “আমি ভুল করেছি। তাই পুলিশ যেন আইন মোতাবেক আমাকে জরিমানা করে সেই অনুরোধ করেছিলাম।” পুলিশ ওই মোটরবাইকের ‘ব্লু বুক’ জমা নিয়ে একশো টাকা জরিমানা করে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “সাংসদ নিজেই তাঁর ভুল বুঝতে পেরে পুলিশ কর্মীদের সাহায্য করেছেন। সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাতে নিরাপদে পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
আরও পড়ুন:দূষণ-বর্গির হানায় নাকাল দার্জিলিং
ঘটনা হল হেলমেট বিহীন মোটরবাইক চালক ও সওয়ারিদের বিরুদ্ধে জেলা জুড়েই কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। কোথাও কোথাও বিনা হেলমেটের চালক, সওয়ারিদের কানধরে উঠবোস করানো, চড়-থাপ্পড় মারা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগও উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে সম্প্রতি তালড্যাংরায় রাস্তা আটকে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে শুধু সাধারণ মানুষই নন, বাদ যাচ্ছেন না পুলিশ কর্মীরাও। ইতিমধ্যে হেলমেট পরে মোটরবাইক না চালানোর অভিযোগ সাত পুলিশ কর্মীকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করেছেন জেলা পুলিশ সুপার। এমনকী পুরসভা ও ব্লক অফিসেও চিঠি পাঠিয়ে সরকারি কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হেলমেট পরে মোটরবাইক চালাতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “পুলিশের চিঠি পেয়েছি। সব কাউন্সিলর ও পুরসভার কর্মীদের বলেছি হেলমেট পরে মোটরবাইক চালাতে।” তবে ঘটনা হল পুলিশের কড়াকড়িতে সম্প্রতি জেলায় হেলমেট পরার চল এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।