জয়দেব ফেরত ভিড়ে মাতে দরবেশ আখড়া

শতাব্দী প্রাচীন একটি মহুয়া গাছ। এক দরবেশের সমাধি এবং তাঁকে ঘিরে নানা অলৌকিক কাহিনি। সেই টানেই আসেন জয়দেব মেলা ফেরত কয়েকশো সাধু, ফকির ও বাউল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

ধোঁয়া উড়িয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

শতাব্দী প্রাচীন একটি মহুয়া গাছ। এক দরবেশের সমাধি এবং তাঁকে ঘিরে নানা অলৌকিক কাহিনি। সেই টানেই আসেন জয়দেব মেলা ফেরত কয়েকশো সাধু, ফকির ও বাউল।

Advertisement

দুবরাজপুরের দরবেশ আখড়ায় বছরের পর বছর ধরে এমনটাই রীতি। ফি বছর ৩-৫ মাঘ সাধু-ফকির-বাউলদের আড্ডা, গান, কথায় মুখর হয়ে ওঠে সারাবছর ধরে নির্জনে পড়ে থাকা ওই এলাকা। যেন মিলন উৎসব। মঙ্গলবার সকাল থেকে জয়দেব মেলা ফেরত সেই আসায় ছেদ পড়েনি এ বারও।

অটলবিহারী নামে এক দরবেশের নাম অনুসারে দুবরাজপুর পুরসভা এলাকায় একটি পাড়া-ই রয়েছে। নাম দরবেশ পাড়া। যদিও তাঁর সমাধিস্থলে বাসবাস করে মাত্র তিনটি পরিবার। প্রচলিত কাহিনি ওই দরবেশ এবং টিকে থাকা মহুয়া গাছকে নিয়েই। দরবেশ দেখভালের দায়িত্বে থাকা তিনটি পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌরচন্দ্র দাস বৈষ্ণব, দুলাল মহান্তরা জানান, তাঁরা আটপুরুষ ধরে বংশ পরম্পরায় এই সমাধিস্থলের দেখভাল করে আসছেন। তাঁরাই শোনালেন সেই কথিত কাহিনি— অতীতে জঙ্গলঘেরা ওই এলাকায় মহুয়া গাছের নীচে কুঁড়ে বানিয়ে থাকতেন অটলবিহারী দরবেশ। হেতমপুর রাজাদের আমলে কোনও একসময় মহুয়া গাছটি কেটে নেওয়ার জন্য এসেছিলেন রাজার লোকেরা। দরবেশ বাধা দিলেও সে কথায় কান দেননি রাজার লোকেরা। মহুয়া গাছটিকে কুড়োলের কোপ দিতেই নাকি সে দিন বেরিয়েছিল রক্ত। গাছ আর কাটতে পারেননি তাঁরা। দরবেশ হাতের চিমটে ছুঁইয়ে গাছের ক্ষতস্থান ভরিয়ে দেন। এখনও অক্ষত সেই মহুয়া গাছ। ওই দরবেশের জীবনাবসানের পরে পাশেই তৈরি হয়েছে সমাধি। ফি বছর তাঁকে স্মরণ রেখেই আসেন জয়দেব ফেরত সাধু-ফকিরেরা।

Advertisement

মথুরা বৃন্দাবন থেকে আসা দীনকৃষ্ণ দাস গোস্বামী, পুরুলিয়া থেকে আসা বাউল পবনদাস, রঙ্গমাতা বৈরাগ্য, খয়রাশোলের ইদিলপুর থেকে আসা জামল শাহ, সকলেই বলছেন, ‘‘বহু বছর ধরে এখানে আসি। সকলের সঙ্গে দেখা হয়, শান্তি পাই।’’ বাউল শিল্পী গৌর জানালেন, এখন আর এই আখরায় আসার জন্য কাউকে বলতে হয় না। তবু জয়দেব মেলার যে ক’টি আখড়ায় বাউল-সাধু-ফকিরদের আখড়া থাকে, মেলার ক’দিন সকলকে আসতে নিমন্ত্রণ করা হয়। অতিথির সংখ্যা কয়েকশো ছাড়ায়। তাঁদের আগে পূর্বপুরুষেরা এ ভাবেই নিমন্ত্রণ করতেন। এখনও সেই রেওয়াজ চলছে। ৪ মাঘ সন্ধ্যায় ওই আখড়ায় বসে বাউল ফকিরি গানের অনুষ্ঠান।

কয়েকশো অতিথির সম্মান রাখতে খরচ জোগায় কে? দুলাল, গৌররা বলছেন, ‘‘পৌষের ১০ তারিখ থেকে গ্রামে গ্রামে মাধুকরি শুরু করি । জুটে যায়। ভক্তেরাও কিছু দেন। তাতেই চলে খরচ।’’ দুবরাজপুর পুরসভা সেখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দে। গড়ে দিয়েছে একটি আস্থানাও। এখন কেবল তাঁদের চাহিদা— একটি মুক্ত বাউল মঞ্চের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement