Migrant Workers

Migrant workers: পরিযায়ীরা ফিরছেন আতঙ্ক নিয়ে

শনিবার গভীর রাতে দাতুরা ও নয়াগ্রামের বেশ কয়েক জন পরিযায়ী কাশ্মীর থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন। 

Advertisement

তন্ময় দত্ত 

মুরারই শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৪
Share:

কাশ্মীর থেকে বাড়ি ফিরে পরিজনের সঙ্গে এক শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র।

ঠিক দু’বছর আগে কাশ্মীরের কুলগ্রামে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাঁচ শ্রমিক। মাঝে এক বছর করোনার কারণে কাশ্মীরের আপেল বাগান বা নির্মাণ কাজে ভাটা পড়লেও এবার ফের চালু হয়েছিল। কিন্তু ফের উত্তপ্ত কাশ্মীর। গত ৫ অক্টোবর মাখনলাল বিন্দ্রো নামে শ্রীনগরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী এবং বীরেন্দ্র নামে এক ভেলপুরি বিক্রেতাকে গুলি করে মেরেছিল জঙ্গিরা। মুর্শিদাবাদ বা মুরারইয়ের যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা দু’বছর আগের জঙ্গিদের আতঙ্ককে বুকে চেপেই একটু বেশি টাকা আয়ের জন্য বা রাজ্যে বিকল্প রোজগারের সুযোগ না পেয়ে কাশ্মীরের আপেল বাগান, চাষের জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবারও পাওনা টাকার সবটা না পেয়েই বাড়ি ফিরতে ভিড় করছেন শ্রীনগরের ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টারে। রোজগারের টাকার অনেকটা গাড়ি ভাড়ায় খরচ করে, ট্রেনে শৌচাগারের সামনে ৩৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরেছেন মুরারইয়ের দাতুড়া এবং নয়াগ্রামের বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক।

Advertisement

সাধারণ নাগরিক ছাড়াও গত সোমবার থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে সেনার নয় জন জওয়ান ও আধিকারিক নিহত হয়েছেন। পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলাগুলির গভীর জঙ্গলের মধ্যে গত নয় দিন ধরে সেনা ও জঙ্গিদের গুলির লড়াই চলছে সে খবর জানাজানির পরেই আতঙ্ক ছড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেনাপ্রধান এম এম নরবণে নিজে জম্মুতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন বলেও সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে। এদিকে মুরারই-২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে দাতুরা ও নয়াগ্রামের বেশ কয়েক জন পরিযায়ী কাশ্মীর থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন।

দাতুড়া গ্রামের আতিউর রহমান ফিরতে পারা পরিযায়ী শ্রমিকদের একজন। তিনি বলেন, ‘‘চলতি মাসের ১৭ তারিখ সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের সতর্ক করা হয়। জঙ্গি হামলায় দু’বছর আগে আমাদের মতো কাজে গিয়ে নিহত হওয়া শ্রমিকদের কথা আমরা সবাই জানি। এবার কাশ্মীর যাওয়ার কথা শুনেই বাড়ির সকলে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু এখানে কাজ কোথায়? কোনও রকমে বারামুলা থেকে ১১০০ টাকা জন প্রতি গাড়ি ভাড়া করে জম্মু পৌঁছে ট্রেনে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরেছি।’’ কাশ্মীর থেকে ফেরা অন্য পরিযায়ী শ্রমিকরা জানান, এ মাসের গোড়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জঙ্গিরা ফের হামলা চালাচ্ছে, খেটে খাওয়া মানুষ জনকেও ফেলছে শোনা যায়। প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর ছাড়ার তৎপরতা দেখা গিয়েছে এবার ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের মধ্যে। পাইকর থানার কয়েকশো শ্রমিক কাশ্মীরে কাজ করেন। এই শ্রমিকদের অভিযোগ, এই রাজ্যে যোগ্য পারিশ্রমিক মেলে না। আবাস যোজনার ঘরও মেলে না। সারাদিন কাজ করার পরে দুশো থেকে আড়াইশো টাকা উপার্জন হয়। তাও সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন কাজ মেলে। অথচ কাশ্মীরে আপেল বাগানে, নির্মাণ শ্রমিকের ও চাষের কাজে আট ঘণ্টা কাজ করলে ছ'শো টাকা থেকে আট'শো টাকা উপার্জন হয়। সঙ্গে টিফিন ও এক বেলার খাবার বিনামূল্যে পাওয়া যায়। জমানো টাকা বাড়িতে পাঠানো যায়।

Advertisement

মিত্রপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘আবাস যোজনার তালিকায় নাম না থাকায় ঘরের টাকা পাচ্ছেন না অনেকে। তবুও তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। একশো দিনের কাজের জন্য এই শ্রমিকরা আবেদন করেননি। আবেদন না করায় কাজ পাননি।’’ পাল্টা দাতুড়া গ্রামের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি মহম্মদ আলিরেজা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের খোঁজ পর্যন্ত নেয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement