প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে করা বিডিও-র অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
মিড ডে মিলের হিসেবে গরমিলের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন বিডিও। ঘটনাটি মুরারই ১ ব্লকের মহুরাপুর হাইস্কুলের।
ব্লক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের সব স্কুলের মিড-ডে মিলের হিসেব ব্লক অফিসে প্রতিদিন পাঠাতে হয়। কত পড়ুয়া সে দিন উপস্থিত এবং কত জন দুপুরের খাবার খেল, সেই হিসেব রাখা থাকে ব্লকে। উপস্থিতি এবং খাবার খাওয়ার হিসেব নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় বিডিও (মুরারই ১) নিশীথভাস্কর পাল স্কুলের রান্না সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। পাশাপাশি ব্লকের তিন আধিকারিক দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই আধিকারিকেরা স্কুলে গিয়ে নথিপত্র পরীক্ষা করে ছাত্র-উপস্থিতি এবং মিড-ডে মিল খাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যায় বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করেন। রেশন ডিলারের কাছ থেকে স্কুলে যত চাল আসে এবং গড়ে প্রতিদিন কত পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায়, সেই হিসেবেও গরমিল ধরা পড়ে।
সূত্রের খবর, এই নিয়ে প্রধান শিক্ষককে লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু, প্রধান শিক্ষক কোনও উত্তর না দেওয়ায় শুক্রবার রাতে মুরারই থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন বিডিও। পুলিশ ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
স্কুলের তথ্য নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে মহুরাপুর হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণির প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য ৪ টাকা ৪৮ পয়সা ও ১০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর জন্য ৬ টাকা ৭১ পয়সা ও ১৫০ গ্রাম চাল বরাদ্দ। স্কুলে গড়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকে।
বিডিও বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির রেজিস্টার ও মিড-ডে মিলের রেজিস্টার পরীক্ষা করে দুর্নীতি ধরা পড়ে। রেশন ডিলারের সঙ্গে স্কুলের হিসেবেও গরমিল ধরা পরে। তিন বছরে মোট ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩২০টাকা এবং ৩২০০ কেজি চালের হিসেব দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক। এই অনিয়মের জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের খাবারে দুর্নীতি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।’’ ওই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বাড়ি থেকে জানানো হয়, তিনি অসুস্থ হয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের দলনেতা বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই মিড-ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ার টাকা নিয়ে দুর্নীতি ঠিক নয়। বিডিও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে অন্য স্কুলগুলিও সতর্ক হবে। ছাত্রছাত্রীরা সঠিক পরিমাণে ভাল খাবার খেতে পারবে।’’