অবাধে: ভিজিটিং আওয়ার পেরনোর পরেও ভিড় ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র
প্রসূতি ওয়ার্ডের ভিতরে একাধিক বেডে বসে পুরুষরা। কেউ বা দাঁড়িয়ে। মহিলার সংখ্যাও কম নয়। ‘ভিজিটিং আওয়ার’ পার হয়ে যাওয়ার পরেও ওয়ার্ড থেকে অনেক প্রসূতির আত্মীয়দের নড়ার নামই নেই। এটাই যেন দস্তুর হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি-কাণ্ডের পর থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন থেকে সেই ঢেউ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে বলে টের পাওয়া যায় না।
আড়শার রাঙামাটি গ্রামের গৌরাঙ্গ কৈবর্তর স্ত্রী ভর্তি হয়েছেন বৃহস্পতিবার। তিনি স্ত্রীর বেডের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই ওয়ার্ডে পুরুষদের ঢোকা বারণ জানেন? প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে তাঁর জবাব, ‘‘এই তো, বেরিয়ে যাব।’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রার বাসিন্দা লবঘন বাউরি সন্তানসম্ভবা মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি ওয়ার্ডের ভিতরে থাকলেও ‘ভিজিটর্স কার্ড’ দেখাতে পারেননি। ওয়ার্ডের মুখেও অনেক মানুষকে জটলা করতে দেখা গিয়েছে।
এ চিত্র শুধু প্রসূতি বিভাগেই নয়, অন্য ওয়ার্ডগুলিতেও দেখা যায়। বিভিন্ন ওয়ার্ডের নার্সরা জানাচ্ছেন, যে সব ওয়ার্ডে পুরুষদের ঢোকা বারণ, সেখানে ভিজিটিং আওয়ার তো বটেই, অন্য সময়েও পুরুষদের অবাধ ঘোরাঘুরি চলে। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টে নার্সদেরই তাঁরা পাঁচ কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নার্সরা জানালেও লাভ হয়নি। এক নার্সের কথায়, ‘‘প্রসূতি ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৫৪, কিন্তু চাপ এতো যে কখনও-সখনও দেড়গুণ রোগী ভর্তি করাতে হয়। এমন অবস্থা যায় যে একটি বেডে দু’জন করে প্রসূতিকেও রাখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রোগীর লোকজনও যদিও কাতারে কাতারে ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে, তাহলে সংক্রমণের আশঙ্কা তো থাকেই। প্রসূতিদের আব্রু বজায় রাখাও দুষ্কর। নিরাপত্তার প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ডাক্তার নেই, বহিরাগতের ভিড়
ব্যতিক্রম শুধু শিশু বিভাগ। ঠেকে শেখার পরে এই বিভাগের দরজায় অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীর সজাগ দৃষ্টি দেখা গেল। দরজায় রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে বসে রয়েছেন এক রক্ষী। কোনও প্রসূতির ছুটি হলে কাগজপত্র দেখে শিশুটিকে দেখে রোগীর পরিচয় লিখে, তবেই ছাড়া হয় বলে জানালেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী। এই বিভাগ থেকেই বছর দেড়েক আগে আড়শার বাসিন্দা এক মহিলার শিশু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলা সরাসরি ওয়ার্ডে ঢুকে শয্যা থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন ওই মহিলা বুঝি শিশুটির আত্মীয়। পরে বাড়ির লোকজনের নজরে আসায় হইচই শুরু হয়। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্তে নেমে ওই শিশুর কোনও হদিস করতে পারেননি।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে কার্ড ছাড়া এত লোক ঢুকছে কী ভাবে? হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ইনচার্জ প্রশান্ত সিংহ মহাপাত্রের স্বীকারোক্তি, ‘‘হাসপাতালে প্রয়োজনের থেকে কম নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। তবুও নজরদারি চালানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু রোগীর পরিজনেরা নানা অজুহাতে ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়েন। রক্ষীদের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁরা হামেশাই ঝামেলা করেন। তবে শিশু বিভাগে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।’’ হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘আমরা স্বাস্থ্যভবনের কাছে আরও নিরাপত্তা রক্ষী চেয়েছি। আবারও চাইব।’’