১০০ দিনের কাজে নালা সংস্কার। এই ছবি এখন আর দেখা যায় না জেলায়। — ফাইল চিত্র।
সিউড়ি দুই ব্লকের কোমা পঞ্চায়েত এলাকার কোমা গ্রামের রাখহরি দাস চেনেন না খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া পঞ্চায়েতের দীনেশ দলুই বা চন্দনা রুইদাসদের। কিন্তু, তাঁদের সমস্যা এক। প্রায় দু’বছর আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেও প্রাপ্য মজুরি না-পাওয়া। শনিবার ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বকেয়া মেটানোর ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত সকলেই।
১০০ দিনের বকেয়া মজুরি নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ধর্নার দ্বিতীয় দিন রেড রোডের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে যে ২১ লক্ষ মানুষের ১০০ দিনের কাজের মজুরি বকেয়া রয়েছে, তা মেটাবে রাজ্য সরকার। ধর্নাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাখহরি-সহ বীরভূমের বেশ কয়েক জন জবকার্ডধারী। যাঁদের কেউ বছরে ১০০ দিনের কাজে নিকাশি নালা সংস্কার করেছেন, কেউ কেটেছেন হাপা (মাঠ কুয়ো) বা পুকুর। কেউ লগিয়েছেন গাছ। মমতার ঘোষণায় স্বস্তি পেয়েছেন সকলেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যে ২১ লক্ষ জবকার্ডধারী কাজ করেও বকেয়া মজুরি পাননি, সেই তালিকায় রয়েছেন বীরভূমের লক্ষাধিক জবকার্ডধারী শ্রমিক। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষের শেষ ভাগ থেকেই বছরে ১০০ দিনের কাজে টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পরের দু’টি অর্থবর্ষে ওই প্রকল্পে ‘লেবার বাজেট’ শূন্য। ফলে দু’ভাবে বিপাকে পড়েছেন গরিব জবকার্ডধারীরা। প্রথমত, কর্মসংস্থানের অভাব। দ্বিতীয়ত, প্রাপ্য মজুরি না-পাওয়া।
‘বঞ্চনার’ অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বকেয়া মেটানোর দাবিতে ২ তারিখ থেকে রেড রোডে ধর্না দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। সেই মঞ্চে শনিবার ১০০ দিনের কাজের ‘বঞ্চিত’ শ্রমিকদের জমায়েত ছিল। এ দিন বীরভূম থেকে (শহর ও গ্রামাঞ্চল মিলিয়ে) দলী নেতাদের পাশাপাশি গিয়েছিলেন বেশ কিছু বঞ্চিত জবকার্ডধারী। সঙ্গে কত জন জবকার্ডধারী টাকা পাবেন, তার তথ্য নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ব্লক থেকে বাসে, কোথাও থেকে ট্রেনে বা ছোট গাড়িতে করে ওই শ্রমিকদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। সিউড়ি ২ ব্লক থেকে তেমনই তিনটি বাস গিয়েছিল। তার একটিতে ছিলেন রাখহরি দাস-সহ ৫০ জন। রাখহরি ও তাঁর সঙ্গী নীলু ডোম, কালোসোনা মাল, প্রতিমা বাগদিরা বলছেন, ‘‘এলাকায় পুকুর খনন, নিকাশি নালা সংস্কার, গাছ লাগানোর মতো কাজ হয়েছিল। আমাদের কেউ ১২ দিন কাজ করেছে, কেউ ২২ দিন। দু’বছর ধরে সেই টাকা বকেয়া রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। দিদি আমাদের জন্য কিছু করবেন, এই বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। দিদির ঘোষণা নিজের কানে শুনলাম। খুব খুশি হয়েছি।’’
খয়রাশোলের পূর্ববড়কোলা গ্রামের রাজেশ বাদ্যকর ,দীনেশ দলুই, চন্দনা রুইদাসেরাও ধর্না মঞ্চে যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে, শনিবার বিকেলে হাওড়া থেকে ট্রেনে ফেরার পথে রাজেশ বললেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছিল কেন্দ্র আমাদের নায্য টাকা আটকে রাখায়। এত দিন পরে সেটা অন্তত পাব। এটা জেনেই ভাল লাগছে।’’