৭৫ মিনিটে তৃণমূলকে তুলোধনা করলেন মাণিক

লাল কাপড়ে মোড়া মঞ্চ। দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্সে সাজানো চারধার। মাঠভর্তি কর্মী-সমর্থক। যাঁর অনেকেই আদিবাসী। ধামাসা, মাদলের সঙ্গে মিলেছে তাঁদের উচ্ছ্বাস। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে যে শহরে ফ্লেক্স, তোরণ ও দলীয় পতাকা তছনছ করে সভা ভন্ডুলের চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা, যে সভায় যোগদানের জন্যে বাস চেয়েও দিনের শেষে পায়নি বামেরা— সেখানেই হাজার চারেকের (সিপিএমের হিসেবে) ভিড় দেখে অনেকে বলছেন, এই জমায়েত পঞ্চায়েত ভোটের আগে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাখবে বাম শিবিরকে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

সিউড়িতে কালেক্টারেট মাঠে বক্তব্য রাখছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

লাল কাপড়ে মোড়া মঞ্চ। দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্সে সাজানো চারধার। মাঠভর্তি কর্মী-সমর্থক। যাঁর অনেকেই আদিবাসী। ধামাসা, মাদলের সঙ্গে মিলেছে তাঁদের উচ্ছ্বাস। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে যে শহরে ফ্লেক্স, তোরণ ও দলীয় পতাকা তছনছ করে সভা ভন্ডুলের চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা, যে সভায় যোগদানের জন্যে বাস চেয়েও দিনের শেষে পায়নি বামেরা— সেখানেই হাজার চারেকের (সিপিএমের হিসেবে) ভিড় দেখে অনেকে বলছেন, এই জমায়েত পঞ্চায়েত ভোটের আগে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাখবে বাম শিবিরকে।

Advertisement

সোমবার বিকালে সিউড়ির জেলা পরিষদ সংলগ্ন জনসভার মাঠের সভামঞ্চ থেকে একযোগে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানান ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। কেন দুটি দল এক পথের পথিক, সিপিএমের পলিটব্যুরোর ওই সদস্য ৭৫ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেলেন। কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেছেন। তবে নিশানায় ছিল বিজেপি ও তৃণমূল। সমালোচনা করলেন বাজেটেরও।

মানিকবাবুর অভিযোগ, ‘‘যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে দুটি দল ক্ষমতায় এসেছে, মসনদে বসে তার উল্টো কাজ করছে। সাধারণ মানুষের জন্যে নয় কালোবাজারি, মুনাফাকারিদের স্বার্থেই কাজ করেছে বিজেপি সরকার। কই তৃণমূল সরকার কেন কথা বলছে না। যে বাজেট তৈরি হয়েছে তার ৭০-৮০ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য নয়। বাজেটে কমানো হয়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকা। কোথায় সরব তৃণমূল? তা হলে কী ভাবে পরিবর্তন এল!’’ মানিকবাবুর দাবি, ‘‘সারদা-নারদায় তৃণমূলের বাঘা বাঘা নেতারা বন্দি। তাই মোদী সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা হয়েছে তৃণমূলের।’’

Advertisement

ঘটনা হল, পালাবদলের পরে এক সময়ের লালদুর্গ বলে পরিচিত এই জেলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বামেরা। পঞ্চায়েতে জেতা দলীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বামেরা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। এলাকার পুরনো নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখন তৃণমূলের শিবিরে। দীর্ঘ দিন দখলে থাকা দু’টি সংসদ কেন্দ্রই হাতছাড়া হয়েছে। লোকসভা ভোটের মতোই গত বিধানসভা ভোটেও দলের ভরাডুবি হয়েছে। মাত্র একটি কেন্দ্রে (নানুর) সিপিএমের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সেই শ্যামলী প্রধানের জয়ের নেপথ্যে আবার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের বড় হাত রয়েছে বলে অনেকের মত। জেলা রাজনীতির কারবারিদের মতে, এই আবহে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে এনে বুকে বল পেতে চায় বাম। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘সেটা সফল হয়েছে, এ দিনের ভিড় থেকেই প্রমাণিত।’’

সোমবার বিকেলে শেষ পর্যন্ত সভা করতে পারাটাকেই নৈতিক জয় হিসাবে দেখছেন সিপিএম নেতারা। কেননা, মানিকবাবুর সভার ২৪ ঘণ্টা আগেই সিউড়ি শহরে তাঁর সমর্থনে থাকা ফ্লেক্স, তোরণ ও দলীয় পতাকা ছিঁড়ে তছনছ করে দুষ্কৃতীরা। সরাসরি না হলেও ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে সিপিএম। শাসকদলের হুমকির জেরে বাস মালিকরা বাস দেননি বলেও সিপিএমের অভিযোগ। তার মধ্যেও মোটরবাইকে করে, অন্য গাড়িতে চড়ে যে ভাবে সভায় কর্মী-সমর্থকেরা এসেছেন তাতে খুশি জেলা নেতৃত্ব। জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার কথায়, ‘‘জয় হয়েছে তাঁদেরই।’’

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের কথায়, ‘‘ভাঙর, আউশগ্রাম, শিবপুরের ঘটনায় প্রমাণিত যে এই অশুভশক্তিকে আর রাখতে চান না মানুষ। কেষ্টবাবুরা এখন লালাতঙ্কে ভুগছেন।’’ জবাবে তৃণমূলের এক নেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে আবার লোকজন আছে নাকি? সেটা এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ সভায় জমায়েতের সংখ্যাও অনেক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে বলে দাবি শাসকদলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement