Teacher's Day Special

পিওনই শিক্ষক, অঙ্ক করান মনসাচরণ

চার শিক্ষিকার মধ্যে একজনকে প্রশাসনিক সংযোগ রক্ষা করতে হয়। রয়েছে চিকিৎসা, মাতৃত্বকালীন-সহ অন্য ছুটিও। অথচ দৈনিক গড়ে ৩০টি করে ক্লাস হয়।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

কীর্ণাহারে জামনা ধ্রুববাটি বসন্তকুমারী গার্লস স্কুলে অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছেন পিওন মনসাচরণ দাস। নিজস্ব চিত্র।

উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষিকা। সেই জায়গায় মেলেনি কোনও শিক্ষিকা। পরিস্থিতি সামল দিতে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেই শিক্ষকের ভূমিকা নিতে হয়েছে।কীর্ণাহারের জামনা-ধ্রুববাটি বসন্তকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে আজ, বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে তাই শিক্ষকদের মতোই সংবর্ধনা দেওয়া হবে স্কুলের পিওন মনসাচরণ দাসকে।

Advertisement

জেলা শিক্ষা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৩৫ জন। ২০১৯ সাল থেকে উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি নিতে নিতে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা-সহ রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষিকা। রয়েছেন ১ জন করণিক, দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং ১ জন কম্পিউটার শিক্ষিকা। ইংরাজীর দু’জন-সহ ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান, ভূগোল, কর্মশিক্ষা এবং বাংলার কোনও শিক্ষিকাই নেই।

চার শিক্ষিকার মধ্যে একজনকে প্রশাসনিক সংযোগ রক্ষা করতে হয়। রয়েছে চিকিৎসা, মাতৃত্বকালীন-সহ অন্য ছুটিও। অথচ দৈনিক গড়ে ৩০টি করে ক্লাস হয়। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষিকা দিয়ে ক্লাস চালাতে হিমশিম খেতে হয় স্কুলকর্তৃপক্ষকে। এমন পরিস্থিতিতেই মুশকিল আসান করেছেন মনসাচরণ।

Advertisement

২০১২ সালে ওই স্কুলে যোগ দেন মনসাচরণ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হলেও তিনি বিএ পাশ। অঙ্কে ভাল দখল রয়েছে। স্কুলে অঙ্কের একমাত্র শিক্ষিকা রয়েছেন অর্পিতা ঘোষকে বিজ্ঞান বিভাগের অন্য ক্লাসও নিতে হয়। সব ক্লাসে অঙ্ক করানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই নিজের কাজের পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ৩টি করে অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী মনসাচরণই।

মনসাচরণের পড়ানোয় ছাত্রীরাও খুশি। সপ্তম শ্রেণির রাজন্যা ঘোষ, মনীষা ঘোষ, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যুষা ঘোষ, শর্মিষ্ঠা মণ্ডলরা বলেন, ‘‘উনি খুব সহজ সরল ভাবে অঙ্ক বুঝিয়ে দেন।’’ খুশি স্কুলের অন্যান্য কর্মী এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যরাও। করণিক পরমেশ্বর দাস এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সন্দীপ মণ্ডল দু’জনেই বললেন, ‘‘উনি স্কুল অন্ত প্রাণ। ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য নিজের কাজ সামলে যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে ক্লাস চালাচ্ছেন তাতে স্কুল ওঁনার কাছে ঋণী।’’

মনসাচরণ নিজে বলছেন, ‘‘ছাত্রাবস্থা থেকেই অঙ্ক আমার প্রিয় বিষয় ছিল। যখন দেখলাম শিক্ষিকা অভাবে ছাত্রীদের ক্লাস হচ্ছে না তখন নিজের কাজ সামলে ক্লাস নেওয়ার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিই।’’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রাধারাণী মণ্ডল জানালেন, শিক্ষিকার অভাবে কখনও একটি ঘরে দু’টি ক্লাস আবার কখনও একযোগে দুটি ঘরে যাওয়া আসা করে ক্লাস চালাতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘উনি অঙ্কের ক্লাস নেওয়ায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে।’’ শিক্ষিকা কম থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে কম্পিউটার শিক্ষিকা বিপাশা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ক্লাস নিতে হয় বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।

আজ, বৃহস্পতিবার অনাড়ম্বর ভাবে শিক্ষক দিবসের আয়োজন করা হয়েছে স্কুলে। সেই অনুষ্ঠানে গত তিন বছর ধরে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে মনসাচরণকেও শিক্ষক হিসাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ বারেও তার অন্যথা হবে না। মনসাচরণের কথায়, ‘‘যত দিন শিক্ষিকার সমস্যা না মিটবে ততদিন ক্লাস চালিয়ে যাব। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন তাতে আমি অনুপ্রাণিত।’’

ওই শিক্ষাকর্মীর এমন ভূমিকার কথা জেনে প্রশংসা করেছেন স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহও। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি শিক্ষা দফতরের আওতাধীন। তবে ওই কর্মীর সদিচ্ছাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চন্দ্রশেখর জাউলিয়া বলেন, ‘‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে স্কুলের কর্মীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান করতেই পারেন। কোনও আইনগত বাধা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement